খেলোগল্পঃ দ্য থাপ্পড় স্টোরি B-)) B-))



↪ তুই আমাকে থাপ্পড় দিলি কেন?
↪ এই থাপ্পড়টা তোরে আগে দেই নাই কেন সেজন্য নিজেরে থাপ্পড় দিতে মুনচায়।(ঠাস)
↪ আস্ত একটা ছোটলোক।
↪ কেন? আমাকে ছোটলোক বললি কেন?
↪ আমার মুনচাইছে।
↪ তাইলে ছোটলোক পোলার লগে পিরিতি করবার দরকার কি?
↪ মুনচায়। 
↪ আমারে ছোটলোক কইছো, অহন থিকা তোর আর আ...আ..মার কোনু রিলেশন নাই।
↪ আচ্ছা বাবা, আচ্ছা ঠিকাছে। তুমিই বড়োলোক। আমিই ছোটলোক। (কিছুক্ষণ থেমে) এখন বলো হঠাৎ করে থাপ্পড় দিলা কেন?
↪ গিয়াস না ফিয়াস কোন তোমার কিলাসমেটের কাছ থিক্কা ৭২০পি'র লিংক দিস কেনে?? ১০৮০ ছাড়া আমি দেখি না, সেইডা জানো না?
____________________________________________________________________________
আমি সামির। এইটা আমার ও বনিয়া'র আলাপনের ছোট্ট একটা অংশ। আমিও যেমন ক্রেজি অও তেমন ক্রেজি মেয়ে। ডেফোডিলে পড়ছি। আমি থার্ড সেমিস্টারে আর ও ফোর্থ সেমিস্টারে।
সিনিয়র জুনিয়র কোনই ভেদ নাই। কতোবার যে ব্রেকআপ আর কতোবার রিবিল্ড হয়েছে সেটা গণনা করতে কম্পিউটারের মাথাই খারাপ হয়ে যেত। যদিও উভয়ই সিএসই নিয়া পড়ছি।
ও হলো প্রোগ্রামিংয়ে বেস্ট আর আমি লজিক্যাল অ্যানালাইজিংয়ে বেস্ট। ভার্সিটিতে আমাদের ক্রেজিয়েস্ট জুটি হিসেবে ফিসফাস বা শোরগোল দুটিই রয়েছে।

কদিন আগে মেঘের মধ্যে বৃষ্টিতে ভিজে চুপসি দুজনেই। মিরপুর ১০ নং গোলচক্করে, কয়েকটা বখাটে পোলাপান আমাদের ভেজা নিয়া টিটকারি করছিল। আমি বেশি কিছু করি নাই। মাইকেল জ্যাকসনের স্টাইলে একটু ডেন্সের ভাব নিসিলাম। পোলাপাইন দৌড়ান দিল। পরক্ষণেই আমি এর বিহাইন্ড দ্য দৌড় আবিস্কার করলাম। আমার প্যান্টের পকেট থেকে পিস্তল বের হবে এমন ধারণায় নিশ্চিত হইয়া পোলাপানগুলা দোড়ানি দিছিল।
অবশ্য এতে আমার বিশাল একটা লাভ হইছে। লাভটা হইলো গিয়া, বনিয়া'র ভুল ভাঙছে। আসলে ও'ই ঠিক আছিল। এখন ঘটনা কিলিয়ার কইরালাই।
ওর স্বভাব নিয়ে প্রায়ই বন্ধুমহলে আমি আড্ডায় ছোট হই(মনের ভুল ধারণা)। ওদের খোচাখুচিতে আমি বিরক্ত হয়ে যাই। সেদিনও বনিয়ার নাম নিয়া রিশু একটা ক্যাচাল লাগিয়ে দিল। হারামজাদার খেয়েদেয়ে কাইম কাইজ নাই সে অযথা বিরক্ত করতে পছন্দ করে।
আমার মেয়েবন্ধু নিয়া সে যা বললো তার কথোপকথন নিম্নরুপ।
↪ আচ্ছা তোর গার্লফ্রেন্ড কি বন থেকে উৎপত্তি হইছিলো??
↪ দুর শালা! এই কথা যদি সে শুনে চাকু দিয়া কপাইয়ালবো তোরে।
↪ হাঃ হাঃ হাঃ হেতিরে আমি পানিতে চুবাইয়া অস্থির কইরালমুনা!!
↪ এই এই এ..কি কইলি?? তুই আমার বউরে পানিতে চুবাইবি? শাল্লা তোর একদিন...
আমি তারে পিঠে কয়েকটা থাপ্পড় দিয়েছিলাম। রেগে গিয়েই। ওরে নিয়া উপহাস আমি সহ্য করতারি না এইডা সে(বনু) জানে। এই ঘটনা শুনার পর আমি অনুমান করছিলাম আমারেই উল্টো চোখ পাকড়াইবো তা না। আমার কপালে একখানা চুমু দিয়া কইলো
↪ তোর এই পাগলামির জন্যই বিয়েটা ভেঙে দিছি।
↪ কি? কি?(আমি থতমত খেয়ে)
↪ হুঁ পুরাই মেন্টালের আচরণ করে বরের আংকেলরে ভিমড়ি খাওয়াইয়া দিসি....... হিঃ হিঃ হিঃ
↪ কি করেছিলি পাগলি?
↪ বেশি কিছু না। উনার সাথে সাকিবস ডাইনে আলাপ হইতাছিল, বুঝছো। আমি উনারে কইলাম.. রাতে আমার দাঁতগুলো বেশ বড় হয়ে যায়। কাউরে কাউরে খেয়ে ফেলতে পারি। আর....
↪ বেচারা আমার সাথে এরপর ৯০ সেকেন্ডও থাকেনি। গ্রিলটা মুখ থেকে ঢপাস করে পড়ে গেল। আর সাথে সাথে টিস্যু দিয়ে মুখটা মুছে বিলটা পে করে চলে গেল। আমি থ হয়ে বসে রইলাম।

এই পাগল মেয়েটা অভিনয় করে নাকি কি জানি? আমি তো ওরে ফাঁকি দেই। এগুলো কি জানে না? নাকি অও আমাকে ফাঁকি দেয়? আমি জানি না। আসলে ঠিক কোনটা?



আমি ঘুম থিইক্কা উডি সহাল সাড়ে আটটায়। হেইদিন বনু আমার বাসায় আইসা উডলো এক্কেরে সাতটায়। মুনে কইলো পাছায় লাত্থি দিয়া তিন তলার নিচে ফালায়া দিই। কিন্তু ঘুম থি চোক্ষু মেলিয়া হেতিরে দেইহা আমি পুরাই মজনু হইয়া গেলাম।
এক্কেরে আসমান থি নাইম্মা আসা পরীর মতো লাগছিলো তারে। আমার সামনে মনে হইলো ডানাকাটা একখান রুপসী পরী আইসা বইছে। আমি ওর বামহাত নিয়া চপ কইরা একখান চুমা খাইয়া কইলাম।
↪ যে আডা ময়ডা মাখো কুনদিন নি দেশে আডার আকাল হরি যায়। আর এতো সকাল সকাল ক্যান?? আমার কাঁচা ঘুমডা দিলা তো বারডা বাজাইয়া। ইচ্ছা হইসিলো তোয়ারে বুঝছো___
↪ কি? কি ইচ্ছা হইছে? (আমি নীরব। সে একটু থেমে) তোর কইবার সাহস নাই? তাইলে___
↪ ইচ্ছা হইতাসিলো তোরে লাত্থি দিয়া নিচে হালায়া দিই। এতো সকালে মানুষ উডে?? ক?
↪ তাইলে দে। দে লাত্থি। আমি রেলিংয়ের উপরে উঠতাসি। যদি লাত্তি না দিবি তাইলে তোর খপর আছে।
↪ উড। উড তাইলে।
আমারে বেওকুফ বানাইয়া যুবতী মাইয়াডা সত্য সত্যই গিয়া রেলিংয়ের উপ্রে উইড্ডা হরলো। এদিকে আমি ফেসটায় এট্টু পানিও দেই নাই। হেতিরে ঘুমভাঙা গলায় কইলাম-
↪ নামো। আমি ওয়াশরুম থেইক্কা আসি। এরহরে তোয়ারে লাত্থি দিমু। নামো কইলাম।(এবার বেশ জোরে)
হেতি কি মুনে করলো কি জানি। চুপচাপ নাইম্মা আসলো। আইসা আমার ডেস্কটপের চেয়ারে বইসলো। আমি ওয়াশরুমে ঢুকতাসি এইসময় ধমক দিয়া কইলোঃ
↪ ডেস্কটপের পাস কি?? কইয়া ঢুকো।
↪ ধুতরাপাতা
আমি এই কথা জানাইয়া আঁউ কইয়া আড়মোড়া দিয়া ওয়াশরুমে ঢুইক্কা গেলাম। হেতি অবশ্য জানে। ধুতরাপাতার লগে একটা এক্স একটা ওয়াই লাগানো লাইগবো। হেইডা কুনোদিনই কওন লাগবো না।
আমার একখান ছুডো ভইন আছে। হেতি আবার আমার পারসোনাল জিনিসপত্তর নিয়া টানাটানি করে। আমার যতগুলা গার্লফেরেন আছিলো, সবগুলার লগে তার হরদম আলাপ হইতো। এইডার লগেও খুব ভাব। আমি ওয়াশরুম থেইক্কা বাহির হইয়া দেহি আমার ভইনডায় আমার লাইগা কিসু না আইনা ওর হবু ভাবীর লাই এভরিথিং নিয়া আইসে।
টমেটো জ্যাম দিয়া স্যান্ডউইচ, কিসমিসের বেরেড, ফিরনি আর একগ্লাস পানি। যদিও বেশি কিসু না কিন্তু ভইনডি তো আমার নাকি?
ডাইনিং টেবিলে বইস্যা বইস্যা বেরেড আর জ্যাম খাইতে খাইতে ভাবতেসিলাম একটু হরেই কি পরিমাণ যন্ত্রণা ভোগ করতে হইবে সেইডার লাইগা মানসিক প্রস্তুতি তো নেয়াই লাগবু। নাকি? যন্ত্রণা অবশ্য হেতিরে নিয়া না। যন্ত্রণা হইলো গিয়া রাস্তার জ্যাম।
ভাবনারে চাকু দিয়া কিরাইল আমার ভইনডি আর বনু। জোরসে ভলিউমে কেটি পেরি'র "ডিস ইজ হাও উই ডু" সংটা ইস্টার্ট কইরা দিলু।
মুঞ্চাইলো, কয়েকডা ডলা দিই গিয়া। মিজাজখানা খারাপ হইয়া গেলু। আমি গিয়া দরজায় থাপড়া দিয়া কইলাম খুল কইতাসি। দরজা খুইল্লা হালাও নাইলে খবর আছে।
আমার পেরমিকায় কইলো "এই মুহুর্তে মোবাইল সংযোগ দেয়া সংযোগ হচ্ছে না। একটু পরে আবার ট্রাই করেন।"
এই কথা হুইনা আমি আবার ডাইনিংয়ে দিলাম দৌড়। মোপাইল খানা থুইয়া আইসি ডাইনিংয়ে। ৫ এস খানা হাতে নিয়া দেখি বাজে ৭টা ৪০। ফেইসবুক ওপেন কইরা দেহি ভইন আর হেতি ইস্টেটাস দিসে
↪ ইটিং ব্রেকফাস্ট উইথ বনিয়া ইন মাই হাউস
আমি কমেন্ট করলাম। ↪ গুড জব। দয়া কইরা আমার রুমডি খালি করো। আমার তর সইছে না।
কমেন্ট করলো(বনু)
↪ নো। আজ তোমারে তুর্কি নাচন নাচিয়ে ছাড়ব আম্রা। হেহ।
আমি কমেন্ট করলাম।
↪ কে কারে নাচায়, হেইডা হরে দেহন যাইপু। মাইনশের পারসোনাল জিনিস নিয়া খপরদারি করণডা ঠিক না। পিলিজ লাগে। খালি করো।
আমার ভইনে কয়
↪ নো। ভাইয়া। আরো ৫ মিনিট।
আমি আর ঘাটাইলাম না। খালি একবার নাকটা উঁচু কইরা কইলাম↪ 'আমার এয়ারফোনডিও রুমের ভিতরে' উহহো। সিট!!
এরহরে ভইনের রুমে গিয়া ওর এয়ারফোনডি লইয়া কানে গুইজা দিয়া ইমরান খানের এলবাম লাগাইয়া দিলাম। কতক্ষণ পরে দেহি তারা আইয়া কইল যে অহন যাওয়ার পারমিশন আছে। যাইতে পারো।
আমি গিয়া ঝটপট রেডি হইয়া গেলাম। তিতুমীর কলেজে একটা কাজ আছে বনিয়ার। ওর কাজিনের কি একটা একাডেমিক সমস্যা হইছে। আমারে লইয়া যাইতে চায়। হেরপরে আমার সাথে ভার্সিটিতে যাইবো।
বনানী আইসা পরথমেই ওর নাইস কাজিনের লগে দেহা কইরা কামডা শেষ হইলো। হেরপরে আমি হেতিরে লইয়া রিকশায় উডি হরলাম। উডার হরে হঠাৎ কইরা আমারে চুক কইরা একখান কিস দিয়া কইলো "তোরে আইজ নাইস লাগতাসে।"
অবশ্য এর কারণও আছে। আমি ভাল কইরা ফিটফাট হইয়াছিলাম। হুডিটা পইরা নিজেরে আশিকী ২ মুভির হিরো হিরো ভাব নিতাসিলাম। যদিও আমি একটু মুখচোরা নেচারের। হেতি অবশ্য এইডা নিয়া তেমন মাথাব্যাথা দেখায় না।
এই সময়ে এক বুইড়া পুলিশ ইন্সপেক্টর রিকশা থামাইয়া বিরাট ভুঁড়ি লইয়া ঠেইলতে ঠেইলতে আমাগরে থামাইলো।
↪ এইডা কি হইতাচে? এই পুলা? এই মাইয়া। তোগোর মানসম্মান বলতে কিসসু নাই? লাজশরম দুনিয়া তাইক্কা ফুটুস হইয়া গেসে??
↪ (আমি) স্যরি। এইয়ার মাথার মাঝে একটু গোলমাল আছে। স্যার, আমাগরে মাফ করি দেন।
↪ মাফ কোরা কি গাছের পাতা যে চাইলেই মাফ কোরা যাইবো?
ততক্ষণে হেতির মাথায় কিছু একটা টগবগ কইরা রান্না হইতাসে। আমি একা একা টের পাইতেসি।
↪ স্যরি। তাইলে কি করতে হইবে?
↪ কি বুঝ না? মাল দেও মাল।
আমি ভাবলাম, খালি খালি ঝামেলা বাড়ায়া লাভ নাই। তাই পকেটের দিকে হাত দিলাম। কিন্তু প্রিয়া মোর ধরিয়া হালাইলো হাত। বেশ শক্ত কইরা। আমার দিকে আগুনের দুইখান গোলা দিয়া চাইয়া কইলো
↪ টেহা কি গাছের পাতা? যে চাইলো আর দিয়া দিলা। এই দেখো। আমি ভিডিও করছি। আর নেটে আপলোডও কইরা দিতাছি। বেটার একদিন কি আমার একদিন।
আমার মুখটা পাংশু হইয়া গেলু। বেচারা পুলিশ অফিসারের মুখটাও কালা হইয়া গেল। কইলো
↪ এই মেয়ে। তোমারে থানায় নিতে অইবে।
↪ চলেন থানায়। আমার আংকেলরে দিয়া আপনার জবের তেরোটা বাজাইয়া ছাড়ুম। চলেন। আমাগো লগে রিকশায় উঠেন। উঠেন কইতাসি।
বেচার পুলিশের মুখটা এখন এক্কেরে বাদল মেঘের মতো হইয়া গেল। কইলো। 
↪ মাগো। মাফ করি দে। আমাগোর অবস্থাডা খারাপ। জানিস না? ঐ ভিডিওটা আপ করিস না। বুড়ো বয়সে মানসম্মান নিয়া টান ধরলে সুইসাইড ছাড়া গতি থাকবো না।
কিন্তু কনের বিধি বাম। সে সবুর করতে চাইলো না। আপলোড করেই দিল। পুলিশ আংকেলরে আমি মিছা আশ্বাস দিলাম, স্যার কিসু হইবো না। ম্যায় হুঁ না? ;)
স্যারে এরপরে ভ্যাবাচেকা খাওনের মতোই চাইয়া থাইকলো। রিকশাওয়ালা রিকশা ছাইড়া দিলু আবার। আর আমি হেতিরে পাম দিয়া আমার মুপাইলখানা ওর হাতে দিয়া কইলাম। এইডা ধরো।
ওর মুপাইলখানা দিল। ভাবসিলাম দিবো না। কিন্তু অবলীলায় দিয়াই দিল। হেইডা আমি হাতে নিয়া কইলাম।
↪ তুমি আপাও নাই?
↪ না। তাইলে ভিডিওটা কই?
↪ আরে ধুর!! ভিডিওই তো করি নাই। রামছাগলটারে জাস্ট, জাস্ট বোকা বানাইলাম এই যাঃ
↪ কি? হু হু হাঃ হাঃ হাঃ
আমি হাসতে হাসতে ওর উপস্থিত বুদ্ধিজ্ঞানরে সেলিব্রেট করলাম। দশ মিনিটের রাস্তায় যেতে যেতে আরো খুনসুটি হইলো। তবে রিকশা ভাড়া দেবার সময় আরেকখান ঝামেলা হইলো।
↪ রিকশা ভাড়া ৮০ টাকা দিতে অইবো আফা।
↪ (আমি) এই ৩০ টাকার জায়গায় ৮০ টাকা? কেন?? কেন?
↪ (বনু) টাকা কি গাছে ধরে?
↪ না টাকা আপনার বাবার মানিব্যাগে থাহে।
↪ (বনু) তা তো থাকবেই। পুলিশ ডাকবো?
↪ আপনে যে একটা টাউট মাইয়া হেইডা আমি আরো আগে বুঝছি। আপনেরা দুইজনরেই রামচন্দর স্যারের কাছে লইয়া গিয়া প্যাদানি দিমু। হ্যারে বলদ বানাইছেন, এইডা গিয়া কয়াম না ভালায় ভালায় ৮০ ট্যাকা দিয়া দিবেন, কোনটা?
↪ (আমি) এই এই, চিন তুমি? আমাদের চিন? তিতুমীর কলেজ বেশি দুরে না। জাহাঙির ভাইরে খবর দিলে তোমার খবর হই যাবু।
↪ মামা। আপনেরা দুইজনেই টাউট পাবলিক পুরাই বুঝছি। ভালই ভালই ৮০ টাকা দিয়া ফুডেন।
আমি তখনই টাকা বের করতাছি এইসময় ঠাস ঠাস কইরা শব্দ শুনলাম। টাকাটা বাইর না কইরা চাইয়া দেহি আমার ম্যাডাম দুই হাতে চড় থাপ্পড়ের ছক্কা ব্যাটিং ইস্টার্ট কইরালচে। ঐ গরিব ড্রাইভারটারেই। আশপাশের লোকেরা দৌড়ায়া দৌড়ায়া আসলো। আমি হেতিরে কোনমতে টাইনা টুইনা ঝগড়া থাইক্কা ছুডাইলাম।
হেতি চিল্লাইতে চিল্লাইতে কইলো। অসভ্য। ইভটিজার। ওরে মাইর দেন।
কয়েকজন পুলিশ দুর থিইক্কা আইসা রিকশাওয়ালারে আরো দুইডা চটকনা দিয়া কইলো, বিয়া করস নাই?
↪ করসি।
↪ কয়টা?
↪ ৪টা।
↪ (পুলিশ) মাশাল্লা। হেরপরেও বদমাসি কমে নাই?
↪ স্যার মাফ করি দেন। আমারে মাফ করি দেন।
আমি ৫০,২০,১০ টাকার নোট হাতে নিয়া রিকশাওয়ালারে দিবার চাইতাছি তহন হেতি আমার গালেও ঠাস কইরা চড় দিয়া কইল হ্যারে ট্যাকা দিতে পারবা না।
অগত্যা আর কি করমু কন। আমিও চড় খাইলাম। হেতি ট্যাকাও দিতে দিল না। রিকশাওয়ালা বেডারে মাইরও দিল, পইসাও দিল নাহ।


মাইয়াডা আগে স্লিম আছিলো না। আমার লগে পিরিতে পইড়া জাদুর কাঠির মতোই সিলিম হইয়া গেসে। হেই কাহিনী নাহয় আরেকদিন কমুনে।
হেইদিন সেলিম স্যারের কেলাসে আমি গভীর মনোযোগ দিয়া কিলাস করতাসিলাম। স্যারে সি প্রোগ্রাম কম্পাইলারের কেলাস করাইতাসিলো। আমি থাইয়ের ধারে(পাশে) বসা আছিলাম। আমি চোখে অপটিকের বড়ো চশমা পইড়া প্রজেক্টরের নীল স্ক্রিনের দিকে হাবার মতো হা কইরা চাইয়াসিলাম।
বনু অনেক দূরে রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দেখছিল আমি কি করি। আমি তখন নীল স্ক্রিনের দিকে প্রোগ্রাম এনালাইজ করতে করতে হাওয়া হই গেসিলাম গা।
হুঠাৎ আমি টের পাইলাম, স্যারে আমার চোখের সামনে মুখোমুখি বসে আমার চোখে তাকায়া আছেন। আমার চশমা থেকে উনার চশমার দুরত্ব আধইঞ্চিরও কম হবে।
আমি সাথে সাথে লজ্জা পেয়ে গেলাম। আমার ফেসে লাল একটা বর্ণের আধিক্য আমি টের পাইতেসি। আমি তখন বাঁদরমার্কা একটা আইডিয়া বের করে ফেললাম।
চোখের মনি স্থির করে চোখ বড় বড় করে স্যারের দিকে তাকিয়ে রইলাম। স্যারেরও হিউমার সেইমাত্রার। তিনিও আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। আমিও।
৩-৫ মিনিট হয়ে গেছে। কেউ ছাড়ার পাত্র না। আমি চোখ আরো বড় করি। স্যার চোখ ছোট করেন। আমি চোখ ছোট করি তো তিনিও বড় করেন। এইভাবে চলতে থাকলো। তবে একবারের জন্যও কেউ চোখের পাতা ফেলছি না।
বিঃশ্বাস করেন। আমি পুরাই সচেতন অাছিলাম। স্যারের কাছে আমি পরাজয় বরণ করতে চাইতেসি না। এভাবে ১৫ বছর(ঘড়িতে ১৫ মিনিট) চলে গেল। এখন একটু গলা কাশার শব্দ শোনা গেল।
এর মধ্যে জাহি স্যার চলে আসছেন। তিনি কয়মিনিট দাঁড়িয়ে ছিলেন আমি ঠিক জানি না। উনাকে সবাই খুব সম্মান করেন। উনার গলার স্বর শুনে সেলিম স্যারের চক্ষুজয়ের ক্ষিধা উবে গেল। তিনি ঠাস করে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে দেখেন দূরে জাহি স্যার দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছেন আর গোঁফে তা দিচ্ছেন।
আমি মোটেও বিব্রতবোধ করিনি। তবে স্যার কিন্তু ইয়ে ইয়ে ইয়ে করতে করতে জাস্টিফাইয়ের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করলেন। আমি তখনও হা করা মুখ অফ করিনি। আমি সমানে এখনো হিউমারের খেলা দেখিয়ে চলছি। জাহি স্যারের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে হা করে রইলাম। একদম সচেতন মনে।
জাহি স্যারও আমার খেলায় জড়িয়ে গেলেন। তিনিও চোখ বড় বড় করে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে ৪ চোখের খেলায় নামলেন। আমার অবস্থা তখন যেন ১০০০ কিঃমিঃ বেগের বাতাসের সামনে খোলা চোখ। আমি চোখের মণি দিয়ে এমনভাবে ভেংচি কাটলাম যে জাহি স্যার ও মা গোঃ বলে বুকে থুথু দিয়ে থতমত খেয়ে দৌড় দিলেন।
ক্লাস তো তখন পুরাই টালমাটাল। শেষ। আমি চোখ বুজে যেন দুনিয়ার স্বর্গসূখ পেলাম। একটানা ১ মিনিট চোখ বন্ধ রাখার ডিসিশন নিয়ে সম্ভবত ৪৪ সেকেন্ড পার হইছে এমন সময় গালে সজোরে একটা চড় থাপ্পড় পড়ার জোরসে স্নায়ুবিক সংবাদ পেলাম।
চোখ খুলে দেখি কন্যা আমার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। চোখ না খুললে বোধহয় আরেকটা চড় কম খেতাম। আরেকটি চড় অন্য গালে বসিয়ে দিল।
আমি তখন ওরে হাত ধরে টেনে নিয়ে জামি'কে চোখটিপে বের হয়ে এলাম। বি ব্লকের একটা ক্লাসরুমে ওরে টেনে এনে পুরো ঘটনা বুঝালাম। কিন্তু ও বুঝতে রাজি না। এরপর সে একখানা ভিডিও দেখাল।
ভিডিওতে লেখা আছে বাংলাদেশে শিক্ষক ছাত্র হোমোসেক্স। হালকা নিদর্শন। সে ওখানেই সম্পর্ক মিটিয়ে ফেলতে চাইলো। পুরাই ব্রেকআপ। আমার মাথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এদিকে। এরপর ওর দুইটি হাত দিতে বললাম। হাত দুটিতে আঙুল দিয়ে বন্ধি করে দেয়ালে ঠাসিয়ে ধরলাম। ওর চোখের সামনে আমার চোখ। ওর নাকের সামনে আমার নাক। ওর লিপের সামনে আমার লিপ।
এই ম্যাজিকে কাজ হয়ে গেল। সে বললো রকি যে ভিডিও আপাইসে ঐটার বিরুদ্ধে একশান নিতে হইবে। আমি কইলাম, দাঁড়াও একটা সপ্তাহ। দেখবা হ্যারে কি বানাই।
Share on Google Plus

গেম চেঞ্জার

বাংলাদেশ কে নিয়ে খালি স্বপ্ন দেখি না টুকটাক কাজও করি । মূলত যান্ত্রিকতায় আবদ্ধ এক সত্ত্বা। ছড়া, কাব্য, গল্পে, ছবি, ভ্রমণে, বিশ্লেষণেও নিজেকে খুঁজে ফিরি।
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 টি তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন