সভ্যতার এক চিলতে রুপ

হ্যালো স্যার, আপনার বিল হয়েছে তিন হাজার দুইশত সত্তুর টাকা পঞ্চাশ পয়সা! ঠিক আছে, আপনি ৩২৭০ টাকা দিয়ে দেন।
- ওহঃ এত টাকা। আমি কি একাই এত টাকা খেয়ে ফেলেছি।
- হ্যাঁ, স্যার আপনি ৩২৭০ টাকা ৫০ পয়সা খেয়েছেন।
- বাট, আমার কাছে তো এখন এত টাকা নেই।
- তাহলে তো সমস্যা! স্যারি স্যার, আপনাকে টাকা দিয়েই যেতে হবে।
- স্যারি, আমি এত টাকা তো সাথে রাখিনি। এখন কি করতে হবে আমাকে। বলেন।
- আপনাকে দেখে তো হাই ক্লাস সিটিজেন-ই মনে হচ্ছে। আপনি কেন এমন করবেন স্যার।
- হুম। পোশাক মানুষকে হাই ক্লাস সিটিজেন বানিয়ে দেয়। আদতে তো আমি লো ক্লাস সিটিজেন।
- ধন্যবাদ স্যার। আপনি টাকাটা দিয়ে ভালই ভালই বিদায় হয়ে যান, নাহলে আমি সিকিউরিটি ডাকতে বাধ্য হব।
- এক্সকিউজ মি। আমি কি এমন কিছু করেছি, যে, সিকিউরিটি ডাকতে হবে?
- হ্যাঁ, স্যার আপনি আমার সময় খরচ করছেন এবং টাকাও দিচ্ছেন না। আপনাকে সিকিউরিটি ম্যানাজার-ই ম্যানেজ করবে। এটা আমার কেস না।
- ঠিক আছে। ডাকেন আপনার সিকিউরিটি ম্যানাজারকে।
- সিকিউরিটি, রিসেপশনে একটু আসো তো। একটা ঝামেলা হয়েছে। কুইক। ওভার।
ওয়াকিটকি রেখে চোখ পাঁকড়ে মেয়েটা আমার দিকে তাকাল। ব্যাপারটা দ্রুতই জটিলতার দিকে যাচ্ছে আমি বুঝতে পারলাম। পরবর্তী ঘটনা কি ঘটতে পারে সেটা আঁচ করতেও পেরেছি অবশ্য।
পাকা ২ মিনিট আমাকে দুনিয়ার জঘন্যতম ভাষায় লোকটা গালাগালি করার পর ফাইভ স্টার হোটেলের এসিস্ট্যান্ট ম্যানাজার আসলেন। এসেই তিনি আমাকে স্যারি বলে জিজ্ঞেস করলেন, কোথাও ফোন করার জন্য। সাথে জানতে চাইলেন আমি এলিট সমাজের কোন প্রতিনিধি কি-না।
আমি যখন তাকে আশ্বস্ত করলাম, যে কোন ক্ষমতাশালী কিংবা বিত্তশালি সম্প্রদায়ের কোনও অংশ আমি নই। স্রেফ পোশাকগুলো ছাড়া তখনই তার মুখ থেকে অশোভন ভাষার ব্যবহার লক্ষ্য করলাম।
ক্রমান্বয়ে ব্যাপারটা শারিরিক নির্যাতনের দিকে যখন এগুচ্ছে তখন আমি চিৎকার দিয়ে বললাম-
- স্টপ ইট! ননসেন্স! ইজ দিস ইয়ু? ইজ ইট দ্যা সোসাইটি? ইস ইট দ্যা সোশ্যাল বিহেভিয়া? ইজ ইট ইউর সিভিলাইজেশন? ইজ ইট? ওোয়াট আম এক্সপেক্টিং এন্ড ফন্ড এট লাস্ট??
রাগে কাঁপতে কাঁপতে আমি বললাম। হাউ মাচ মানি ইউ গাইজ নিড? হাউ মা? হাউ? টেল মি। আই উইল গিভ ইট টু ইউ অল অ ইউ পৌপারস!
- উই আর এক্সট্রিমলি স্যরি। স্যার। উই ডোন নিড ইয়ুর মানি। প্লিজ ফরগিভ আস। প্লিজ স্যার। দ্যাট হ্যাপেনস বিফোর ইউর ভয়েস, ইট ওয়াস এক্সট্রিমলি অফুল। প্লিজ ডোন্ট লেট আস ডাউন। উই আর এক্সট্রিমলি স্যরি।
- স্যারি। ইয়েস, দিস ওয়ার্ড ইজ লাইক  অা শিল্ড টু প্রটেক্ট ইউর আনএনলাইটেন্ড বিহেভিয়ারস! এন্ড আই নো, আই ডোন্ট হ্যাভ দ্যা হেমা টু ব্রিক দিস ওয়ান। ইউ আর রিয়েল লাকি আই থিংক। বিক-া-জ ইউ হ্যাভ দ্য ওয়ার্ড! ওকৈ, লেমি নো, হাউ মাচ ইউ নিড। দ্য নিডি গাইজ।
- স্যরি স্যার। ইউ ডোন হ্যাভ টু পে। প্লিজ ফরগিভ আস। উই ডিড ভেরি ভেরি রং টুডেই।

শেষ পর্যন্ত ওরা টাকাটা আর নেয়নি। আমি জানি, ওরা টাকার পুজারী।  কেবলমাত্র টাকাই ওদের কাছে চরম আরাধ্য বস্তু। কিন্তু সভ্যতার মুখোশ পরে ভেতরে পুষে রাখা অসভ্যতার যে এক চিলতে রুপ ওরা দেখালো, সেটা কি মিথ্যে হবে কখনো?
Share on Google Plus

গেম চেঞ্জার

বাংলাদেশ কে নিয়ে খালি স্বপ্ন দেখি না টুকটাক কাজও করি । মূলত যান্ত্রিকতায় আবদ্ধ এক সত্ত্বা। ছড়া, কাব্য, গল্পে, ছবি, ভ্রমণে, বিশ্লেষণেও নিজেকে খুঁজে ফিরি।
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 টি তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন