মহীয়সী নারী থিওসী অ্যারিপাস। রাজপরিবারের মেয়ে তিনি। অত্যন্ত অমায়িক ব্যবহার, বুদ্ধিমত্তা ও দৃঢ় মনোভাবের জন্য তিনি বিঃখ্যাত হয়েছেন গত কয়েক বৎসর যাবত। মহামান্য রাজা যেই সমস্ত ক্ষেত্রে ব্যর্থতার আশংকা করেছিলেন এবং ভাল নির্বাহী কর্মকর্তার খরায় ভুগছিলেন সেগুলোর অর্ধেক তিনি রাণীকে দিয়ে দিয়েছেন। নাগরিক-তন্ত্রের জন্য যেসব প্রজা আন্দোলন করা শুরু করেছিল সেটা থিওসীর শান্ত মষ্তিষ্কের বুদ্ধি না থা থাকলে স্পার্টা, এথেন্সের ন্যায় কিং থিওডোরের রাজ্যেও নগর রাজ্য প্রতিষ্টিত হয়ে যেত।
কয়েক ঘন্টা পরেই সূর্যদেব ওঠবেন, এবং ৩'রা মার্চের দিন শুরু হবে। থিওসীর স্বামী কিং থিওডোর রক্সিডেস সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন ঠিক ৩ বছর আগের এই তেসরা মার্চে। রাতভোর সময়। ঝলমলে চাঁদ পশ্চিমাকাশে নিজেকে খুইয়ে ফেলেছে মধ্যরাতের আগেই তাই একেবারেই ঘুটঘুট অন্ধকার এখনো। হপলাইট(সৈন্য/দেহরক্ষী) লিউওডেনাস হঠাৎ অস্ফুট ধ্বনি শুনল। সে নিঃশ্চিত এটা মহীয়সী থিওসী'র কন্ঠ। নিশ্চয়ই কোন গোলমাল হয়েছে। প্রাতঃবেলায়ই তুর্যধ্বনি শোনার কথা। আর রাণীর কিছু হলে অবস্থা শেষ।
সাধারণত রাণীর অনুমতি ছাড়া লিওডেনাস বাসকক্ষে প্রবেশ করে না। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এ বিপদজনক মুহুর্তে তাকে যেতেই হবে। তাই সে সংকোচবোধ রেখেও তৈলবাতি হাতে দ্রুতপায়ে এগিয়ে গেল।
ততক্ষণে প্রায় নগ্ন থিওসী ফুলশয্যায় উঠে বসেছেন। পরিচর্যাকারীণীগণও কেউ জেগে নেই। রাণী তাঁদের কাউকেও ডাকছেন না। তাঁর বক্ষযুগলও সম্ভবত উন্মুক্ত কারণ পেছন দিকটা পুরোপুরি খালি এবং তিনি ঘেমে গেছেন। তৈলবাতির শিখায় গৌর পিঠদেশে ঘামের বেশ বড় বড় বিন্দুগুলো লাল আলো প্রতিফলন করছে। মহামান্য রাণীকে এ অবস্থায় দেখে প্রৌঢ় লিউওডেনাস মাথা নিচু করে ফেলল। সে অবনত মস্তকে জিজ্ঞেস করলো
➯ আদেশ শিরোধার্য। মহারাণী আমার মস্তক আপনার পদতলে অর্পিত।
মহামান্য থিওসী কিছু বললেন না। লিওডেনাস মনে মনে চিন্তা করছে তাঁর স্ত্রী এলিসার সমবয়সী হবেন মহীয়সী এ নারী। উজ্জল গৌরবর্ণের রাণী এ রাজ্যের সবচেয়ে জ্ঞানী অথচ দুর্বল বাহু সম্পন্ন নিষ্টুর একজন নারী।
লিও যখন এইসব ভাবছে ততক্ষণে রাণী থিওসি এক মটকা পানি গোগ্রাসে গিলে ফেললেন যেটা লিওডেনাসের কাছে বেশ অস্বাভাবিক মনে হলো। সে গর্দভের মতো তখনও দাঁড়িয়ে থাকল। রাণী তাঁকেও যেতে বলছেন না। পানি পান করে তিনি অবশের মতো চুপটি করে বসে থাকলেন। লিও বেশ খানিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর তিনি উঠে দাঁড়ালেন। বিশ্বস্ত লিওডেনাস তখনও মাথা নিচু করে আছে।
রাণী নিঃসংকোচে পাশে রাখা স্ট্যান্ড থেকে স্ট্রফিন পরে নিতে চাইলেন। তিনি সম্পুরণ অনাবৃত হয়ে এক মুহুর্ত আড়চোখে খেয়াল করলেন লিও তাঁর দিকে তাকাচ্ছে কি-না। যথারীতি সে তাকায় নি দেখে আশ্বস্ত হলেন।
লিওডেনাস নিজেকে ধৈর্য্যবান হিসেবে দেখার শপথ নিয়েছে। সে আড়চোখে এখনো দেখছে থিওসী তার দিকে চেয়ে মৃদু হাসছেন। ভেতরে ভেতরে ক্রোধে জ্বলছে আর রাণী সেটা বুঝেই হাসছেন। এই বালিকার বয়স বড়জোর ২৫-২৬ হবে। অথচ কি নিষ্টুরতা এই রাণীর মনে। স্কাইরো রাজ্যের সবাই জানে রাণী মহীয়সী। অথচ আমি জানি রাণী থিওসী অ্যারিপাস কতটা নিষ্টুর। রাজ্যে কোনসময় বিদ্রোহ দেখা দিলে সে রাণীকে নিয়ে কোথাও পালিয়ে যাবে। প্রয়োজনে মেসিডোনিয়ার গ্রামে গিয়ে স্থায়ী বাসস্থাপন করে ফেলবে।
➯ যাও। আমি আজ আর ঘুমাবো না। কিং থিও কি করছেন আমাকে জানাও।
➯ যথা আজ্ঞা, মহারাণী।
যাবার সময় লিও উভয় কানে শুনল নিষ্টুর রাণীর অট্রহাসি। এই হাসির কারণ সে জানে। সে রাণীকে ১০১ বার অভিশাপ দিতে দিতে কিং থিওডোরের একান্ত সচিব ও দেহরক্ষী অলিপের কাছে গেল। অলিপ তাকে জানাল কিং এখনো ঘুমে আছেন।
থিওসীর কক্ষে আবার যখন সে যাবার অনুমতি প্রার্থনা করল, ততক্ষণে রাণীর সহচারীণী দলের প্রধাণ আর্কেনিক্সা পথ আগলে বললেন-
➯ রাণী আমাকে জানানোর জন্য বলেছেন। মহামান্য কিং কি করছেন?
➯ মহামান্য কিং এখনো ঘুমন্ত।
➯ যাও দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে থাক। আর তোমার সময় শেষ হলে গ্রেগজি আসবে তাই না?
➯ ও তো স্বপ্নের তাবির বলতে পারবে তাই না?
➯ হ্যাঁ মহান আর্কেনি।
➯ ঠিক আছে। তুমি এখন যাও।
0 টি তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন