মুভি রিভিউঃ “হ্যারি এন্ড দ্য হেন্ডারসনস”



আসুন একটা অবিখ্যাত মুভি দেখি। সম্পুর্ণতই পারিবারিক পরিবেশে বসে দেখার উপযোগী একটি হলিউডি ফিল্ম। বানর সদৃশ আজব স্বভাবের বৃহৎ একটি প্রাণিকে নিয়ে “হ্যারি এন্ড দ্য হেন্ডারসনস” মুভির কাহিনী নির্মিত। এই প্রানিটি হলো সাসকোয়াচ বা বিগফুট। অনেকেই হয়তো এর নামই শুনেন নি। রিভিউ পড়ার আগে তাই এই প্রাণীটি সম্পর্কে কিছু জ্ঞান না দিলে কি চলে?

⚁ বিগফুট
প্রাইমেট বর্গের হোমোনিডি গণের একটি বিবর্তিত প্রাণি বিগফুট বা সাসকোয়াচ। উচ্চতায় ১০ ফুটের ন্যায় আর সারা শরীর লোমে ভরা। অনেকটাই শিম্পাঞ্জী কিংবা গরিলার মতো। এদের ওজন ১০০০ পাউন্ডও হতে পারে। বুঝাই যাচ্ছে কেমন দানব দানব টাইপের তাই না?
হাত দুটোও লম্বা। মেয়ে বিগফুটের স্তনও আছে মানুষের ন্যায়। তবে একটা ব্যাপার হলো তাদের স্তন তুলনামূলক একটু নিচের দিকে থাকে।
বাস্তবে কোনদিনও এদের না দেখা গেলেও ক্রিস্টোফার মারফি তাঁর রিসার্চ আর্টিকেলে বেশ জোরালোভাবে দাবি করেছেন যে, সাসকোয়াচ আছে।
ফিল্মে যেটা দেখা যাচ্ছে, বিগফুটের মুখে সবসময় রসবোধের একটা ভাব ফুটে থাকে। তার সম্পর্কে পজিটিভ আইডিয়া পাওয়া যাবে মুভিটিতে।

⚁ ছবি নিয়ে কিছু কথাঃ
উইলিয়াম ডিয়ার। দুনিয়াজোড়া খ্যাতি যে পেয়েছেন তা একদমই না। তবে তিনি যে মেধাবী, তা নিয়ে মোটেও সন্দেহ নেই। কানাডিয়ান ফিল্ম প্রডিউসার উইলিয়াম ডিয়ার একাধারে একজন প্রডিউসার, স্ক্রিনরাইটার ও অভিনেতা। যতদূর জানি “হ্যারি এন্ড দ্য হেন্ডারসনস” মুভিটিই তাঁর সেরা কাজ। এখন বয়স ৭২+। তাঁর কাজগুলো অতোটা মুল্যায়ণ পায়নি বলেই আমার ধারণা।
ওয়ার্ল্ড সায়েন্স ফিকশন সোসাইটি থেকে তাঁর ছবি “হ্যারি এন্ড দ্য হেন্ডারসনস” হুগো অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হয়েছিল। এর আইএমডিবি রেটিং ৫.৯। আমার মুখখানা পাংশু হয়ে গিয়েছিল এই রেটিং দেখে। পরে রিস্ক নিয়েই ফেললাম। আর হতাশ না হয়ে বরং উচ্চশিতই হয়েছিলাম।
ব্যতিক্রমী এই মুভিটি কোমল মনে গভীর রেখাপাত করতে বাধ্য। কাহিনীতে সাসপেন্স আছে, আছে এরপর কি ঘটতে পারে সেটা নিয়ে অনুমান করার মতো কিছু ফ্রেম। বিনোদনের জন্য যথেষ্ট।
তবে যারা পাকনা লোক তাদের কাছে হয়তো বিরক্তিরই কারণ হতে পারে। তবে ব্লগারদের ভাল লাগারই কথা। আমি এই মুভিকে দশে আট দেব।

⚁ তথ্যঃ
মুক্তিঃ ৫'ই জুন, ১৯৮৭
পরিচালকঃ উইলিয়াম ডিয়ার
মিউজিকঃ ব্রুস ব্রাটন
ভাষাঃ ইংরেজি
স্ক্রিনপ্লে: উইলিয়াম ডিয়ারউইলিয়াম ই. মার্টিন, এজরা ডি. রাপাপোর্ট
ইউটিউব ট্রেইলার লিংকঃ youtube.com/watch?v=5DOX1Poxro4
ট্রেইলারঃ দেখুন এখানেই-



⚁ কেন মুভিটি দেখবেনঃ
একই স্বাদ নিয়ে আর কতদিন থাকবেন। রোমান্স নিয়ে আর কত, ধুম ধারাক্কা মারপিটের মুভি আর কত দেখবেন? উইল্ড লাইফের আগরম পাগরম আর কত রে ভাই?
আমরা মানুষ হিসেবে কতটা প্রাকৃতিক সেটা ঘুর্নাক্ষরে দেখিয়ে দিয়েছেন উইলিয়াম ডিয়ার। সেই কাজে তিনি ১০০ ভাগ সফল হয়েছেন আমি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি। লোভ, ভয়, নিজের বেঁচে থাকাটা নিয়ে আমরা কতটা মানবিক থাকতে পারি সেটার যেন বাস্তবিক একটা প্রতিচ্ছবি এই ছবিটি। বাচ্চাদের জন্য শতভাগ উপযোগী। এর্নি হেন্ডারসন পিচ্চিটা'র শিশুসূলভ আচরণ যা আসলেই প্রাকৃতিক রিএকশন সেটা বাড়তি সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। ওর বড় বোন সারাহ হেন্ডারসনের ভূমিকাও বেশ ভাল তবে ওঁর ভাইয়ের চেয়ে পুরোই বিপরীত আচরণ বলব আমি।
ষোড়শী সারাহের অভিনয় বেশ উপভোগ্য হবে সবার জন্যই। ওর বিরক্তি, রেগে যাওয়া এগুলো খুব চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। বিশেষত লুল পুলাপানরা.... :P 
একটা সিনে ওর ক্ষেপে যাওয়াটা চরম মনে হয়েছিল আমার কাছে। হাঃ হাঃ :) :)
অভিনয়ের মান অনেক ভাল। যদিও কেউই সিরাম মানের অভিনেতা/অভিনেত্রী না। ঐ পিচ্চিটা(অ্যার্নি) কিছু কিছু জায়গায় অসাম অভিনয় করেছে। জর্জের জায়গায় জন লিথগ্রো খুব ভাল মানিয়েছে। আর তাঁর স্ত্রী ন্যান্সি হেন্ডারসন হিসেবে মেলিন্ডা ডিয়ন চমৎকার অভিনয় করেছেন। ভিলেন ডেভিড সাচেটের অভিনয়ে ১০ এ ৯.৫ দেব আমি। তবে পিচ্চিটা একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় শতভাগ আবেদন উপস্থাপন করতে পারেনি। একটু কাঁচা লাগছিল এই যাঃ

⚁ কাহিনীঃ
সবুজ বন ও উঁচু উঁচু পাহাড়বিশিষ্ট শিয়েটোলের নিঝুম বনে বনে লম্বা শিকারাভিযান শেষে পরিবার নিয়ে ফেরত আসছেন জর্জ হেন্ডারসন। রাস্তায় হঠাৎ একটি বানরের মতো ঘন চুলবিশিষ্ট প্রাণীকে অসাবধানতা বশত গাড়ির সামনের দিক হতে ধাক্কা দিয়ে ফেলেন তিনি। তাঁর পিচ্চি ছেলে এটাকে বিগফুট বলে সনাক্ত করে আর তিনিও তাতে সম্মত হন।
একটা ন্যাড়া মাথার লোক(ভিলেন) ঐ বিগফুটের পিছু পিছু আসছিল শিকার করতে। সে জর্জের গাড়ির ভাঙা নাম্বারপ্লেট পেয়ে অনুমান করে বিগফুট জন্তুটি তাদের ঘরে থাকতে পারে।
নির্জীব ঐ প্রাণীটি বাসার গ্যারেজে মৃতাবস্থায় ফেলে রাতে তাঁরা ঘুমোতে যান। কিন্তু মাঝরাতে ভয়ানক এক বিপদের সম্মুখীন হন তাঁরা এই শিম্পাঞ্জীর ন্যায় আকৃতির বিকট প্রাণিটি নিয়ে।
যাইহোক, এই ভয়াবহ প্রাণিটি একসময় তাঁদের সাথে পোষ মেনে যায়। পরিবারের সদস্যের ন্যায় একজন হয়ে যায় আর তার নাম দেয়া হয় হ্যারি। এর মধ্যে সে শহরের বিভিন্ন বাসাবাড়িতে গিয়ে মানুষকে বিপদে ফেলে দেয়।
যেখানে শহরবাসী বিশ্বাসই করতো না সাসকোয়াচ বলে কিছু একটা আছে সেখানে তাঁরা প্রাণহানির ভয়ে ভীত হয়ে পড়ে। বন্ধুক কেনার তোরজোড় পড়ে যায় সারা রাজ্যেই।
এদিকে জ্যাক নামের ঐ ভিলেন পাগলা কুত্তার মতো হয়ে ওঠে হ্যারিকে জীবিত অথবা মৃত ধরতে। এখন প্রশ্ন হলো জর্জ কি পারে জ্যাকের হাত থেকে হ্যারি'কে বাঁচাতে? ওকে নিজের আবাসে ফিরিয়ে দিতে। নাকি এক বিরাট ট্রাজ্যাডিই হবে ওখানে? যেখানে কয়েক বিন্দু অশ্রু আপনা থেকেই চোখ থেকে বের হতে বাধ্য?

Share on Google Plus

গেম চেঞ্জার

বাংলাদেশ কে নিয়ে খালি স্বপ্ন দেখি না টুকটাক কাজও করি । মূলত যান্ত্রিকতায় আবদ্ধ এক সত্ত্বা। ছড়া, কাব্য, গল্পে, ছবি, ভ্রমণে, বিশ্লেষণেও নিজেকে খুঁজে ফিরি।
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 টি তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন