টিম মাশরাফি কি তাহলে টি টুয়েন্টিতেও নিজেদের নতুন যুগে নিয়ে যাচ্ছে



সবে ২য় ওভার চলছে। স্কোরবোর্ডে তাকাতে বাংলাদেশী সমর্থকদের যেন জন্মের অনিহা। কেউ কেউ মুড অফ করে তাকাচ্ছেন আর আশার সাগরে হাতড়াচ্ছেন। অবস্থাটা এমন যেন আজ ৫০ রান করাই দায়। ২য় ওভার শেষে রান ২, উইকেট ২। আর ৩য় ওভার শেষে রান ৬, উইকেট ২।
এ সময় উইকেটে বাংলাদেশের সমর্থকদের আশার প্রদীপ সাকিব। রুম্মান ওরফে সাব্বিরকে ভরসা করা যায় কম। এদিকে সাকিবের পড়তি পারফর্ম্যান্স। অজানা আশংকায় পাগলা দর্শকদের ভেতরটা হাহাকার করে ওঠল। ওদিকে পাকি আর ভারতীয় পেজগুলোতে পোস্ট কমেন্ট দিয়ে বাংলাদেশ দল ও সমর্থকদের যেভাবে ট্রল করা শুরু হয়েছে তাতে রাগে ক্ষোভে অনেকেই গালগালি শুরু করেছে।
ক্রিকেটে পাকি, ভারতী, বাংলাদেশী এ তিনটি দলের সমর্থকরা একে অন্যের পিছনে আঙুল ঢুকাতে বরাবরই পারদর্শী। গেল ভারত পাকিস্তানের খেলা শুরুর আগে থেকেই বাংলাদেশী সমর্থকরা তৈরি থেকেছিলেন পাকি/ভারতী যারাই হারুক পচানোর জন্য তারা সোৎসাহে কাজ করবেন।
পাকিদের গোহারা হেরে যাবার পর তারা উন্মুখ হয়ে ছিল, শ্রীলংকার সাথে বাংলাদেশের খেলার দিকে। ৩ ওভার শেষে যখন ৬ রানে ২ উইকেট, তখন তো তারা চিল্লিয়ে বলা শুরু করলো কাঙালীরা আজ শেষ। ৫০ রানও করতে পারবে কি-না সন্দেহ। সাথে ভারতী ট্রলবাজরাও তাল দিয়ে বলতে থাকল আহাঃ আজ বাংলাদেশের এ কি হলো, বড়ই মায়া হচ্ছে বাংলাদেশী ভাইদের জন্য।
এই সময় ত্রাতা হিসেবে যেন আভির্ভূত হলেন সাব্বির। তার জন্য ২টি বিকল্প ছিল। একটি হলো, ধীরে সুস্থে খেলা আর শেষে মোটামুটি সম্মানজনক একটি স্কোর দাঁড় করানো।
আরেকটি হলো পাল্টা আক্রমণ করা। এক্ষেত্রে দল যেকোন সময় অলআউট হবার ঝুঁকি বেশি। এমনও হতে পারে অর্ধশত করাও মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে।
যাইহোক, সাব্বিরের জন্য আজ ভাগ্য সহায় ছিল বলতেই হয়। তার আসার পর ৪র্থ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ২৪, উইকেট ২। একেবারে স্বপ্ন দেখার মতো অবস্থা, যেভাবে বোলারদের বল পেটানো শুরু করলেন, যে শেষমেশ দলকে নিরাশার কালো মেঘ থেকে ঝলঝলে সুর্যের খোলা আকাশের নিচে নিয়ে আসলেন। এ যেন স্বস্থির একটা জায়গা। পাশে থেকে মৃদুমন্দ বাতাস বইছে, গাছের ছায়ায় বসে বাংলাদেশ সমর্থকরা গালগল্প করছেন।
নাটকীয় এই ইনিংসের জাদুকর সাব্বির হলেও পড়তি ফর্ম থেকে নয়া ফিরতে পারাটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য দুশ্চিন্তা থেকে অবমুক্তি ছিল সাকিবের রান পাওয়াটা। শুধু কি রান পেয়েছেন? বরং প্রথম বলেই প্যাভিলিয়নের পথ দেখিয়ে ছাড়লেন বিপক্ষ দলের ভয়ানক অস্ত্র দিলশানকে। আল আমিন ও তাসকিনও দুর্দান্ত বোলিং করেছে। মাহমুদুল্লাহ সাইলেন্ট কিলার হয়ে ব্যাটে দ্যুতির পাশাপাশি শ্রীলংকার সবচেয়ে বেশি পারফরমার চান্দিমালকে আর মালামাল সংগ্রহের সূযোগ থেকে বঞ্চিত করলেন। এদিকে আল-আমিনের বলে ক্যাচ ওঠা বাংলাদেশের শেষ অস্বস্তির কারণ ম্যাথিউস'কে পড়িমড়ি করে সাাকিব ক্রিজ থেকে বিদায় করেই ছাড়লেন। ভারতের সাবধানী থাকায় উইকেট না পাওয়া মুস্তাফিজ তার কাটার জাদু দেখালেন। উইকেট ১টি হলে কি হবে ৪ ওভারে রান দিলেন মাত্র ১৯।
ক্যাচ মিসের ঘটনা এই ম্যাচেও হয়েছে। তাতে কি? দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়ে সেগুলো পুষিয়েও দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে সৌম্য'র ক্যাচটা ভুলার নয়। বাংলাদেশ দলের টিম ম্যানেজম্যান্ট ব্যাপারটা আরো গুরুত্ব নিয়ে দেখা দরকার। কথায় আছে না সাবধানের মার নেই।
শ্রীলংকান সমর্থকদের সাথে সুহৃদ সম্পর্ক বাংলাদেশীদের। এই পরাজয়ে তারা মনোক্ষুণ্ণ হলেও দিনশেষে বাংলাদেশ ক্রিকেটে শুভাকাঙ্খী কিন্তু তাঁরাই। ওয়ানডেতে দাপট দেখিয়ে থাকা বাংলাদেশ টি-টুয়েন্টিতেও নিজেদের পেশাদারীত্বের ও বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখিয়েছে কাল। টিম মাশরাফি কি তাহলে টি টুয়েন্টিতেও নিজেদের নতুন যুগে নিয়ে যাচ্ছে? আমি অন্তত আশা করছি, ভরসা করছি। 

কালকের ম্যাচের কিছু ছবি-




Share on Google Plus

গেম চেঞ্জার

বাংলাদেশ কে নিয়ে খালি স্বপ্ন দেখি না টুকটাক কাজও করি । মূলত যান্ত্রিকতায় আবদ্ধ এক সত্ত্বা। ছড়া, কাব্য, গল্পে, ছবি, ভ্রমণে, বিশ্লেষণেও নিজেকে খুঁজে ফিরি।
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 টি তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন