আমার বিপিএল চুলকানি



এবারের বিপিএল নিয়ে আমি আশাবাদী যেমনটি দেবব্রত দাদা। শুরু থেকে বিসিবি ও বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল যে পরিমানে সতর্ক ও হিসেবী, তাতে এবার যে কেলেঙ্কারি ঘটবে, সেটা চিন্তা করা ঠিক হবে না একদম লিখে দেওয়া যায়। বিসিবি প্রধান থেকে শুরু করে সাধারণ কর্মকর্তারা পর্যন্ত একটা পদক্ষেপ নেওয়ার আগে সাত বার করে গত দুই আসরের সঙ্গে নিজেদের অবস্থান তুলনা করছেন।
একেবারে চোখ বুঝে বলে দেওয়া যায়, বাংলাদেশের ইতিহাসে এতো হিসেবী, সচেতন কোনো আয়োজন এর আগে হয়নি।

ফলে এই বিপিএলের কোনোরকম নিন্দা করার ইচ্ছে যে আমার নেই, সেটা আর নতুন করে নিশ্চয়ই না বললেও চলে। তারপরও কয়েকটা ছোট বড় বিষয় থেকেই যাচ্ছে।

চুলকানি নং ১ঃ
আচ্ছা! বলিউডের নায়ক নায়িকা ছাড়া কি অনুষ্টানের মোল্লাগিরী ফলানো যায় না? দূর গাঁয়ের মোল্লা ছাড়া যেমন মিলাদ মাহফিলের ঝলকানিটা তেমন চোখে লাগে না ঠিক তেমন একটা ধাঁধা কি বিসিবির মাথায় বসে গেছে? আচ্ছা আমাদের দেশের যারা সেলিব্রেটি আছেন তাঁরা কি একেবারেই চোখের নজরে পড়ে না? আমি না করছি না বলিউড এনে বারোটা চৌদ্দটা বেজে যাবে, তবে তাঁদের সিডিউল নিতান্ত কম রেখে পারলে হলিউড থেকে এনে দেখান। টাকা খরচ করার এতই গরজ থাকলে হলিউড থেকেই আনেন। নোংরামির প্রশ্ন যারা তুলবেন তাঁদের বলি বলিউডের চেয়ে হলিউডের নোংরামি অনেক কম। এটা নিয়ে খামাকা মাথা গরম করবেন না।

ক্রিকেট নিজেই অনেক গ্ল্যামারাস খেলা। এর গ্ল্যামার বাড়াতে হৃত্মিক, জ্যাকুলিনদের কোনো দরকার নেই। নিতান্ত যদি সৌন্দর্য বাড়াতে চান, উপমহাদেশের চার টেস্ট খেলুড়ে দেশের চার জন কিংবন্তী ক্রিকেটারকে মঞ্চে আনুন। তাদের সম্মাননা দিন, তাদের মুখের কথা আমরা শুনি; সেটা অনেক বেশী জ্বলজ্বলে ব্যাপার হবে।
আরো বেটার হবে ১০ দেশ থেকে অন্তত দশজন কিংবন্তী ক্রিকেটারকে মঞ্চে আনুন। তাঁদের নিয়ে ক্রিয়েটিভ কোন শো করুন। দেখবেন কিভাবে সাড়া পড়ে যায়।
এই বলি* চক্র থেকে বেরিয়ে আসুন। কেকে-এর চেয়ে জেমস, বাচ্চু ভাইদের ওপর ভরসা করুন। আজকাল তরুনরা দেশে যাদের গান শোনেন, তাদের গানের ব্যবস্থা রাখুন। ব্যস। হয়ে যাবে।
বিসিবিকে আমি তাই অনুরোধ করবো, এই ব্যাপারটা আরেকবার বিবেচনা করতে।

চুলকানি নং ২ঃ
এই বিপিএলে খেলোয়াড়দের বিভিন্ন দলে বন্টন (আমি ব্যবস্থাটাকে বন্টনই বলছি) করার যে উপায় করা হয়েছে, তা বাংলাদেশের তারকাদের জন্য অত্যন্ত অসম্মানের হয়েছে। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক ভাবেও সাকিবদের জন্য একটা দারুন অবমূল্যায়নের একটা প্রকল্প হয়েছে।
প্রথমত সর্বোচ্চ দামের হিসাবে দেশী ও বিদেশী ক্রিকেটারদের যে ফারাক করা হয়েছে, তা অবাস্তব, অপমানজনক, বৈষম্যমূলক এবং আত্মঘাতীমূলক।
বিদেশী ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বিক্রয়মূল্য যেখানে রাখা হয়েছে ৫৫ লাখ টাকা প্রায়, সেখানে দেশী ক্রিকেটারদের সর্বোচ্চ ক্যাটাগরি, ছয় আইকন ক্রিকেটারের সর্বোচ্চ দাম ধরা হয়েছে ৩৫ লাখ টাকা মাত্র।
বাংলাদেশের আইকন ক্রিকেটারদের মধ্যে আছেন সারা বিশ্বের বিভিন্ন টি-টোয়েন্টি লিগের মহা আকর্ষণ, বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। আর বিদেশী সর্বোচ্চ ক্যাটাগরিতে গেইল, আফ্রিদি, সাঙ্গাকারার মতো আকর্ষনীয় খেলোয়াড় যেমন আছেন, তেমনই আছেন আহমেদ শেহজাদ, রবি বোপারা, রিচার্ড লেভি, আন্দ্রে রাসেল, ড্যারেন স্যামি, থিসারা পেরেরার মতো খেলোয়াড়।
সাকিব বাদ দিন। এইসব বিদেশী খেলোয়াড়দের চেয়ে তামিম, মুশফিক, নাসির, রিয়াদ এবং মাশরাফির মূল্যটা কোন বিবেচনায় ২০ লাখ টাকা কম হয়!
সমস্যাটা এ পর্যন্ত হলেও কথা ছিলো না।
কারণ, বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল বারবারই বলছেন, তাদের ইচ্ছে ছিলো না, বিদেশী খেলোয়াড়দের দাম এতো বাড়ানোর। কিন্তু এর চেয়ে কমে এসব ‘তারকা’ পাওয়া যেতো না। আজই চায়ের দোকানে এসব নাম শোনার পর এক বন্ধু বলছিলেন অবশ্য, ‘কী আমার তারকা সব!’
তাও মেনে নিলাম এরা তারকা। এদের দরকার।
সেই দরকার মেটাতে বিসিবি আরও একটা অন্যায় করেছে। ছয়টি দলকে স্বাধীনতা দিয়েছে বিদেশী খেলোয়াড়দের সঙ্গে মূল সিস্টেমের বাইরে গিয়ে ৭০ হাজার ডলারের ওপরেও চুক্তি করা যাবে। সেটা দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হতে হবে। ইতিমধ্যে ছয়টি দল এই সুযোগ নিয়ে গেইল, আফ্রিদি, সাঙ্গা, পেরেরা, শোয়েব মালিক ও দিলশানের সাথে চুক্তি করে ফেলেছে।
কানার ভাই অন্ধও জানে, এর প্রতিটা চুক্তি ৭০ হাজার ডলারের ওপরে হয়েছে। আজ সংবাদ সম্মেলনে বিপিএল কাউন্সিলের সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিক ধারণা দিয়েছেন, একটি অন্তত চুক্তি প্রায় দেড় লাখ ডলারের হয়েছে। মানে, সাকিবের চেয়ে এই ছয় তারকার অন্তত একজন প্রায় তিন গুন টাকা বেশী পাবেন এই আসর থেকে।
আপনি যতই বিপিএলে রাশ টানার যুক্তি দিন, ওদিকে গেরো এমন আলগা করে দিয়ে কোনো কথাই আর চলতে পারে না। এই কাজের মাধ্যমে পরিষ্কার আমাদের সাকিব-মাশরাফিদের বঞ্চিত ও অপমানিত করা হলো।
একদিকে বিদেশীরা আন্ডারহ্যান্ড চুক্তি করার সুযোগ পাবেন। অন্যদিকে দলগুলোর আগ্রহ থাকলেও সাকিবদের ৩৫ লাখ টাকার এক পয়সাও বেশী দেওয়া চলবে না!
এ কোন শিব ঠাকুরের দেশের আইন?

একটা আইন করে দিন তাহলে। বলুন যে, দেশের ছয় জন ও বিদেশী ছয় জন, মোট বারো জন ক্রিকেটারের ওপর থেকে আমরা অর্থসীমা তুলে নিলাম। এদের সঙ্গে দলগুলো দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় যত টাকার খুশী চুক্তি করতে পারবে। ব্যাস, দুধকা দুধ, পানিকা পানি হয়ে যাবে। আমাদের ছেলেদের ক্ষমতা থাকলে ওরাও দেড় লাখের চুক্তি পাবে।
হ্যা, আপনারা বলছেন, তাতে টাকা আদায় করা মুশকিল হবে। গত দু আসরে যেটা হয়েছে।
প্রথম কথা হলো, টাকা আদায় করে দিতে না পারলে সেটা বিসিবির ব্যর্থতা। দ্বিতীয় কথা হলো, আপাত সমাধাণ হিসেবে বিদেশীদের ক্ষেত্রে যেমন আপনারা ৭০ হাজারের দায়িত্ব নিয়েছেন; তার বেশীতে চুক্তি হলে দায়িত্ব নেবেন না বলেছেন। দেশীদের ক্ষেত্রেও তাই বলে দিন। তারপর কেউ চুক্তি করলে এটা জেনেই করবে যে, বাকী টাকার ঝুকি আছে।
মোট কথা, আমাদের ছেলেদের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হতে পাবে।
মনে রাখবেন, ব্যাপারটার নাম বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ। আমরা আমাদের তারকাদের ছোট করে আর যাই হোক আমাদের দেশের প্রিমিয়ার লিগ দেখতে চাই না।
আপনি নিশ্চয়ই কল্পনা করতে পারেন না যে, হঠাৎ একদিন আইপিএলে ধোনির চেয়ে পিটারসেনের দাম বেড়ে গেছে!
সবকিছুতে ভারতের কপি করি আমরা। ওরা নিজেদের ব্যাপারে যেটুকু সচেতন, আমরা তো তার শতাংশও নই। নিজেদের মান নিজেরা না রাখলে বাইরের কেউ এসে মান বাড়াবে না। দয়া করে, নিজেদের মান দিন। অহং বোধটা জাগিয়ে তুলুন।

দেবব্রত মুখোপাধ্যায় অবলম্বনে
Share on Google Plus

গেম চেঞ্জার

বাংলাদেশ কে নিয়ে খালি স্বপ্ন দেখি না টুকটাক কাজও করি । মূলত যান্ত্রিকতায় আবদ্ধ এক সত্ত্বা। ছড়া, কাব্য, গল্পে, ছবি, ভ্রমণে, বিশ্লেষণেও নিজেকে খুঁজে ফিরি।
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 টি তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন