তিমা ভাল আছে। সে মানসিক ব্যাধি নিরাময় কেন্দ্রে অনেকটা সুস্থ হয়ে গেছে। বটবৃক্ষের দুঃস্বপ্ন আর তাকে তাড়া করছে না। মেয়েটির কাছে এখন আর কোনও দৈত্য দানব এসে আক্রমণ করে না। ওকে হাতে নিয়ে বিষাক্ত ঠোঁট দিয়ে চেটেপুটে খায় না। তিমার মানসিক অবস্থা হলো সুস্থ। কিন্তু কনস্যুলার বলেছেন যে এটা স্রেফ তার অভিনয়। স্বাভাবিক জীবনে ছেড়ে দিলে কিছুদিন পর আবার সে নারকীয় তান্ডব শুরু করে দেবে।
⇲ বিশাল একটি বটবৃক্ষ
গ্রামের নাম বটিজার গাঁ। নামকরণের কারণ অনেক হাস্যকর তবে এতটুকু বিশ্বাসযোগ্য এখনো। বিশ্বাসযোগ্য হবার কারণ হলো বিশাল বটগাছটি। এটি এখনো স্বগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এটা কত'শ বছর ধরে যে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে তা সাধারণ কোন মানুষ ধারণাই করতে পারে না।
কেউ কেউ বলে যে এটা শায়েস্তা খাঁর আমলের, এমনকি কেউ বুকে হাত দিয়ে বলে যে এটা বখতিয়ার খিলজিরও আগের সময়ের বটগাছ।
যাইহোক, নামকরণের কারণ হলো, অনেক কাল আগে এই গ্রাম উজার হয়ে গিয়েছিল। বটগাছ থেকে একটি মানবশিশুর কল্লা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু গ্রামের কেউই দিতে রাজি হয়নি। এরপর শুরু হয় ভয়ংকর কিছু ব্যাপার। রাতে কেউ ঘর থেকে বের হলে আর ফিরে আসত না। সকালবেলা বটগাছের নিচে একদিকে তার কল্লা(মাথা) আরেক দিকে তার দেহ পাওয়া যেত। ভীত মানুষরা তারপরও কোন কল্লা দিতে রাজি হয়নাই। অবশ্য এক বুড়ী রাজি হয়েছিল তাঁর কল্লা দিতে। তাঁর কল্লা কেটেও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বটগাছের ঐ অদৃশ্য শক্তি বুড়ীর কল্লা দেয়াতে আরো রেগে যায়। সে আরো বেশি মানুষের কল্লা নিতে থাকে। তবে শিশুদের ছাড়া।
তারপর থেকে মানুষ ভয়ে গ্রামের জমিজমা নুন্যতম দরে বিক্রয় করে দিয়ে ভাগত।
এইভাবে সবাই চলে গেল। কেউ থাকলো না। ধীরে ধীরে পুরো গ্রামটিই উজার হয়ে গিয়েছিল। দক্ষিনে আছাদোল্লা গ্রাম আর উত্তরে ভবানীগাও থাকায় কেবল দিনের বেলা বটিজারগাঁও এ লোকেরা আসত যেত।
কত যে বছর গেছে আর কেউ সাহস করেনি এই গাঁয়ে বসত করতে। ব্রিটিশ আমলের ১০০ বছর গেছে। এরপরও কেউ সাহস করেনাই এ গ্রামে ঘর করতে। জমির মালিকরা মাঝেমধ্যে এ ওর কাছে বিক্রি করেছে। লর্ড বাউনের সময়ে একবার এখানে নীলচাষের জন্য জমি বাছাই করা হয়েছিল। কিন্তু যেদিন থেকে জমিতে কাজ শুরু করা হলো, ঐদিনই লর্ড বাউন নীলের ঠিকাদার ও কুঠির মালিক বিভিন্নভাবে মারা যায়। লোকেরা উচিত শিক্ষা হয়েছিল বলে এখনো স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে। নীলকুঠির মালিক লোকটা পায়খানায় পা পিছলে এত জোরে আঘাত পেয়েছিল যে তাতে জ্বর ওঠে। আর ঐ জ্বরেই ২ দিনের মধ্যে সে মারা যায়।
ত্রিমাত্রিকা যখন তাঁর দাদীর কাছ থেকে ঐ বটগাছটির কথা শুনে সেদিন ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিল। তবে এখন আর সে ভয় পায় না। সে সময়টি ছিল ওর বয়সঃসন্ধিকালের সময়। দিনের বেলায়ও বটগাছটির পাশ দিয়ে যেতে তাঁর গা ছমছম করত। আর এখন তাঁর বয়স ২৩। এই বয়সে সে রাত ২-৩টার সময়ও গাছের নিচে অবলীলায় বসে থাকতে পারে।
⇲ জোসেফ
আজ পুর্ণিমা রাত হলে জোসেফের জন্য ভাল হতো। সে সুইজারল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে এসেছে। বাংলাদেশের মানুষদের সরল জীবন যাপনে সে মুগ্ধ। ছায়াকুঠির নামে একটা রেস্ট হাউস আছে। ওখানে বাংলাদেশের মেয়েকে নিয়ে রাত কাটানো যাবে। মিঃ জোসেফ নিজের দেশের ও ফ্রান্স, জার্মানি, লন্ডনের দেহপসারীনীর দেহ উপভোগ করেছেন। উনার সখ হলো বিশ্বের নানান জাতির মেয়েদের উপভোগ করা। আগামি সপ্তাহে কলকাতা যাবেন তিনি। তবে এর আগে একেবারে বাংলার গ্রামের কোনও মেয়েকে চান তিনি।
জোসেফের গাইড সবুজ নামের তরুণ ছেলেটি বেশ করিৎকর্মা। যথারীতি একজন মেয়েও যোগাড় করে ফেলেছে। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো সেই অবিবাহিত মেয়ে নিজেই বিদেশি সুদর্শন ছেলের সাথে বিছানায় যেতে আগ্রহী। সবুজের কেন যেন মনে হলো, এই মেয়েটির কোনও সমস্যা আছে। তাই সে জিজ্ঞেস করেই বসল একবার। কেন, আপনি এ কাজ করতে চান? মেয়েটি বলল আত্মবিশ্বাসই তাকে এ পথে এনেছে।
কিসের আত্মবিশ্বাস সেটা জেনে সবুজ চোখ মুখ উল্টিয়ে ফেলেছিল প্রায়। এইরকম কিছু শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না ছেলেটি।
মেয়েটার নাম লিটা। প্রকৃত নাম লায়লা। লায়লা থেকে লিটা। তার আত্মবিশ্বাসের জায়গাটা হলো বিচিত্র রকমের যৌনসুখ দিতে পারার সক্ষমতা।
লিটা মনে করে, সে যেহেতু অনেকে পর্ন দেখেছে। সেহেতু সে যৌন সুখের নিত্য নতুন কয়েকটা উপায় বের করে ফেলেছে। আর বিদেশী কোন নাগরিক হলে তো কথাই নেই। ঐ সুখ দিয়েই বেটাকে বাগে এনে ফেলবে। আর ইউরোপে মাইগ্রেশন কনফার্ম।
লিটা ঠিক রাত ৯.০০ ঘটিকার সময় ছায়াকুঠি'রে পৌঁছাল। জোসেফ ঘরেই ছিল। সে নিজে এসে রিসিভ করলো। এই অজপাঁড়াগাঁয়ে এইরকম ভাল ইংরেজি কেউ বলতে পারবে সেটা দেখে ডঃ জোসেফ (পিএইচডি) অবাকই হলো।
সবুজ বাড়ি থেকে আসতে আসতে সকাল ৯.১০ বেজে গেল। সে ছায়াকুঠি'রে এসে যা আশা করেছিল ঠিক তা-ই পেল। মেয়েটির আবিষ্কৃত পদ্ধতিতে জোসেফ সন্তুষ্ট।
তবে সমস্যার কথাটা হলো, সবুজের জন্য অপেক্ষা করছে। সবুজ নিজে যোসেফ'কে যেন লিটা'র উদ্দ্যেশ্যের কথাটা কায়দা করে বলে। এমনও বলেছে যে, প্রয়োজনে খ্রিস্টান হতেও রাজি আছে সে।
যথারীতি বিকেলবেলা পুর্বদিঘী'র পাড় ধরে হাটার সময় যোসেফের কাছে গুছিয়ে বললও সবুজ। উত্তর শুনে আরেকবার চোখ কপালে ওঠল তার। যোসেফ জীবনে প্রথম এত বৈচিত্রময় যৌনতা উপভোগ করেছে। আর এ কারণে লিটা'কে বিয়ে করার কথাও সে ভেবেছে।
কিন্তু ওর স্বার্থ ছিল সেটা জানলে এই সুখ উপভোগ করার দরকার ছিল না। লিটার যত টাকা লাগে সে দিতে রাজি আছে কিন্তু তার দেশে ওকে নিতে রাজি নয়।
বেচারি লিটা শেষমেষ ১ লাখ টাকা উদ্ধার করে ছাড়ল যোসেফের কাছ থেকে। তবে যোসেফকে এতে অসন্তুষ্টও দেখা গেল না।
⇲ ত্রিমাত্রিকা
রাত দেড়টা। বাংলা মদের স্বাদ নিতে ভুলানাথের ঘর থেকে বেরিয়ে বটিজার গাঁয়ের দিকে ফিরছে যোসেফ। এটা তাঁর দ্বিতীয় দিন এই গ্রামে।
বিখ্যাত ঐ বটগাছের নিচে এসে সে যতটা অবাক হয়েছে তার পরিমাপ করলে সেটা অতীতের সব বিস্ময়কে ছাড়িয়ে যাবে। মদ খাওয়ার কারণে সে কোনদিনও মাতালগিরি করেনি। হ্যালুসিনেশনও হয়নি। কিন্তু আজ যে-টা দেখছে সেটা কি হ্যালুসিনেশন নয়?
সম্পুর্ণ নগ্ন একটি মেয়ে। চুল অনেক দীর্ঘ। মাটিতে পড়ে যায় যায় এমন। চাকচিক্যময় যৌবন। ঠায় ১০ মিনিট দাঁড়ানোর পর তার জ্ঞান কাজ করল।
আরে, পাশেই তো সবুজ আছে। ওকে জিজ্ঞেস করলেই তো হয়? সে যা দেখছে সবুজও কি তা দেখছে?
কিন্তু পেছনে চেয়ে দেখে সবুজ ওখানে নেই। তাহলে কি ঘটলো? আমি কি স্বপ্ন দেখছি? গায়ে চিমটি কেটেও বুঝে নিল বেচারা যোসেফ যে এটা স্বপ্ন নয়। এটা বাস্তব।
মেয়েটির দিকে আরো তাকিয়ে থাকতে যোসেফের মন চাইল। মেয়েটার পেছনদিক দেখা যাচ্ছে। সে মেয়েটার দিকে এগিয়ে যেতে চাইল আর তখনই সহচর সবুজের নিতম্বে হোঁচট খেয়ে ওকে আবিস্কার করলো।
সবুজ অজ্ঞান হয়ে গেছে। টর্চ দিয়ে দেখল মুখে ফেনা। এ নির্ঘাত ভয়ে জ্ঞান হারিয়েছে। কিন্তু যোসেফের কাছে সবুজের চেয়েও বড় ইস্যু হলো ঐ রহস্যময়ী নারীর কাছে যাওয়া।
⇲ আবির্ভাব
রাত দেড়টা। বাংলা মদের স্বাদ নিতে ভুলানাথের ঘর থেকে বেরিয়ে বটিজার গাঁয়ের দিকে ফিরছে যোসেফ। এটা তাঁর দ্বিতীয় দিন এই গ্রামে।
বিখ্যাত ঐ বটগাছের নিচে এসে সে যতটা অবাক হয়েছে তার পরিমাপ করলে সেটা অতীতের সব বিস্ময়কে ছাড়িয়ে যাবে। মদ খাওয়ার কারণে সে কোনদিনও মাতালগিরি করেনি। হ্যালুসিনেশনও হয়নি। কিন্তু আজ যে-টা দেখছে সেটা কি হ্যালুসিনেশন নয়?
সম্পুর্ণ নগ্ন একটি মেয়ে। চুল অনেক দীর্ঘ। মাটিতে পড়ে যায় যায় এমন। চাকচিক্যময় যৌবন। ঠায় ১০ মিনিট দাঁড়ানোর পর তার জ্ঞান কাজ করল।
আরে, পাশেই তো সবুজ আছে। ওকে জিজ্ঞেস করলেই তো হয়? সে যা দেখছে সবুজও কি তা দেখছে?
কিন্তু পেছনে চেয়ে দেখে সবুজ ওখানে নেই। তাহলে কি ঘটলো? আমি কি স্বপ্ন দেখছি? গায়ে চিমটি কেটেও বুঝে নিল যোসেফ, যে এটা স্বপ্ন নয়, এটা বাস্তব-ই।
মেয়েটির দিকে আরো তাকিয়ে থাকতে যোসেফের মন চাইল। তার পেছনদিক দেখা যাচ্ছে। আরো এগিয়ে যেতে চাইল আর তখনই ভুপৃষ্টে পতিত সহচর সবুজের নিতম্বে হোঁচট খেয়ে ওকে আবিস্কার করলো। আর বিশাল একটা উদ্বেগ থেকেও যেন মুক্তি পাওয়া গেল।
সমস্যার কথা হলো সবুজ অজ্ঞান হয়ে গেছে। টর্চ দিয়ে দেখল মুখে ফেনা। এ নির্ঘাত ভয়ে জ্ঞান হারিয়েছে। কিন্তু যোসেফের কাছে সবুজের চেয়েও বড় ইস্যু হলো ঐ রহস্যময়ী নারীর কাছে যাওয়া।
সবুজের জ্ঞান ফেরানোর জন্য, যোসেফ যে একেবারে চেষ্টা করেনি তা নয়। মাথায় জুতা দিয়ে কয়েকবার আঘাত করেছিল ডঃ যোসেফ।
এতে করেও যখন জ্ঞান ফেরার কোন উপায় দেখলো না, তখন সে সিদ্ধান্ত নিল এটা পরে দেখা যাবে। অথবা ঐ মেয়ের কাছ থেকেই সাহায্য চাওয়া উচিত। সে লক্ষ্যেই কদম ফেলে এগুতে থাকল।
একরাশ ভয়, শংকা, উত্তেজনা, কৌতুহলমিশ্রিত মন নিয়ে অভিনব কোন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে যোসেফকে। মনে হচ্ছে আজ পৃথিবীর গুঢ় কোন রহস্যের সাথে বাস্তবিকই তার মোলাকাত হবে। এমনও হতে পারে এই মোলাকাত করতে গিয়ে সে নিঃসীম সীমান্তে মিলিয়ে যাবে। দেহ এখানে কোথাও পড়ে থাকবে। হয়তবা সুইজারল্যান্ডেও তার দেহ না পৌঁছাতে পারে। তাতে কি? একদিন তো মরতেই হবে।
দিব্যজ্ঞান থেকে মষ্তিষ্ক সচেতন রাখার প্রাণপণ চেষ্টা করছে যোসেফ, কিন্তু ঘোর লাগা শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। তার চোখ এখন ঐ দীর্ঘকেশী নগ্ন কন্যা ব্যতিত কোনদিকেই যাচ্ছে না। আশপাশের কিছুই যে, চোখ দিয়ে আর অবলোকন করা যাচ্ছে না। একটা অদ্ভুত শক্তি যেন ভর করেছে তার মষ্তিষ্কে। যেটা তার দৃষ্টিশক্তি নিয়ন্ত্রণ করছে।
ঢের মনে আছে নীল ট্রাউজারটি পরে বেরিয়েছিল যোসেফ যা এই আঁধারে বোঝাই যাচ্ছে না। আর গায়ে ফুলহাতা টি শার্ট। এ-দেশে গরমকাল সবে শুরু হচ্ছে। অমাবস্যা হলে থাকত ঘুটঘুটে অন্ধকার। আজও চাঁদ পুর্ণতা পায়নি। পশ্চিমদিকে ঘন্টা দুয়েক পরেই অস্ত যাবে। তাই এখনো অতোটা আঁধার না।
ঐ কনে আবার পরী টরী না-তো? না-কি কোন এঞ্জেল? কি হতে পারে? ভেতরের যত জাগরিত শক্তি আছে সেটা দিয়ে ভাবার ও জানার জন্য চেষ্টা করছে ডঃ যোসেফ। আর মন্ত্রমুগ্ধের মতো ঐ বিবসনা নারীর পিছু পিছু হাটছে।
আজ যোসেফের ভাগ্য ভালই বলতে হয়। বেশ কিছুদুর যাবার পর তার মোবাইল ফোনটি বেজে ওঠলো। আইফোন ফাইভ এস। এর চমৎকার শব্দে ঐ নারী পিছন ফিরে তাকালো। কিন্তু যোসেফ মোবাইলের স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকায় ঐ নারীর সম্মুখ-দেশ প্রদর্শনের ভাগ্য হলো না। তবে অন্তঃচক্ষু দিয়ে সে দেখে নিল। দুইটি চিত্রও মানসপটে এঁকে ফেলল। এর একটা সুদর্শন আর অপরটি কুৎসিত।
ফোনটা কেটে দিয়ে ক্যামেরা অন করে ভিডিও রাখার মতলব করেছিল। কিন্তু এই সম্মোহন ভংগ হওয়াতে দুর্ভাগ্যজনকভাবে ঐ নারীটি আর ওখানে ছিল না। সে কোনদিকে যে চলে গেল যোসেফ কোনভাবেই ঠাহর করতে পারলো না।
⇲ কোলাহল
সরকারী দলের বেশ প্রভাবশালী নেতা আলাল মিয়া'র সুনজর পড়েছে বটবৃক্ষের ওপর। অবশ্য নজর একদমই পড়ত না। এর কৃতিত্ব ডঃ জোসেফ এর।
কিছুদিন আগে "Effect of Different Concentrations of IAA (plant hormone) on Root Initiation" শিরোনামে প্লান্ট সায়েন্স নিয়ে গবেষণা শেষ করেছে ডঃ জোসেফ।
বটবৃক্ষের ওপর নজর পড়েছে তার এখন। আর বটিজার গাঁয়ের বটবৃক্ষের অদূরে সম্মোহিত হওয়ার ব্যাপারটা নিয়ে সে খুব ইন্টারেস্টেড।
গ্রামের মানুষের কাছ থেকে ভয়াবহ সব ঘটনা জানার পর কলকাতা যাবার চিন্তা মাথা থেকে বাদ দিয়ে ভিসার মেয়াদ একমাস বাড়িয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডঃ যোসেফ। আর এলাকার যে কয়জন প্রভাবশালী আছেন তাদের সাথে যোগাযোগ করে এই গাছ নিয়ে গবেষণা করতে সাহায্য চাইল সে।
এখানেও আরেক বিপত্তি ঘটে গেল। সরকারী দলের স্থানীয় এম.পি. এক সাংবাদিকের কাছে বলেছেন, এই গাছটি অত্র জেলার অন্যতম গুরুত্বপুর্ণ ঐতিহ্য। এটা নিয়ে ধানাই পানাই তিনি সহ্য করতে রাজি নন। এটা থাকবে এবং এজন্য উনি শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও গাছের জন্য সংগ্রাম অব্যাহত রাখবেন।
সাধারণ জনগণের কাছে এই গাছটি আলোচনার কোন বিষয়ই ছিল না এতদিন। কিন্তু পত্রিকা মারফত এখন এটা ভালই উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে। চায়ের দোকানে আলোচনার বিষয়বস্তু হিসেবে ভালই জায়গা করে নিয়েছে বটগাছটি। অন্যতম কারণ হলো জেলা প্রশাসন ও এলজিইডি চাচ্ছে এই দিকে রাস্তা সম্প্রসারণ করতে। আর এই কাজ করতে গেলে বটগাছ কাঁটা ছাড়া গত্যন্তর নেই।
সেই সাথে আরেকটি গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। সরকারী দলীয় নেতা আলাল মিয়া'র সাথে বিদেশী শয়তানদের নাকি একটা গোপন চুক্তি হয়েছে। একটা শয়তান নাকি ইতিমধ্যে বটগাছ নিয়ে তার যন্ত্রপাতি দিয়ে নানান পরিক্ষা নিরিক্ষা শুরু করেছে।
তাকে যাবতীয় সহায়তা করছে ঐ নেতা, তার পাতিনেতা আর গুন্ডারা। এলাকার কোন মানুষকে গাছের ধারে কাছে ভিড়তে দেয়া হচ্ছে না। তবে খোদ বটিজার গাঁয়ের মানুষ বেশিরভাগ লোকই এইসব ব্যাপারে নির্লিপ্ত মনে হচ্ছে। এর কারণ হতে পারে তাদের কেউই শিক্ষা দিক্ষায় তেমন নজর দেয় না। আর এখনো আগ্রহ জন্মায়নি। দুঃখজনক হলেও সত্য মেট্রিক পাস কোন মানুষও এই গাঁয়ে নেই।
তবে গাঁয়ের সুবিখ্যাত ছিফৎ মিয়ার চায়ের দোকানে বসে কবিরাজ সফদর আলী সবাইকে আশ্বস্ত করেছেন এই বলে যে, ধর্মের কল বাতাসে এমনিতেই নড়ে।
এই কথায় সবাই আশ্বস্ত না হলেও গুটিকয়েক বুড়ো মানুষ নিশ্চিন্ত। জোয়ান বয়সী কিছু মানুষ আবার উন্মুখ হয়ে আছে। ওরা অপেক্ষা করছে একটি বা অনেকগুলো কল্লা কাটা লাশ দেখার জন্য।
⇲ ব্যর্থ অপেক্ষা
সবুজের জ্ঞান ফিরেছে আড়াই দিন পর। সদর হাসপাতালে আইসিউতে ছিল। হৃদযন্ত্রে গোলযোগ ছিল। মষ্তিষ্কে রক্ত চলাচল অস্বাভাবিক ছিল। জ্ঞান আসার পর এক ঘন্টা কোন কথা বলতে পারেনি। এরপর তাকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
সবুজের সাথে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার খবর ডঃ জোসেফ নিজে শুনতে চান। কেন ও এইভাবে পড়ে গিয়েছিল। সে কি দেখেছিল। আমার সাথে ঘটে যাওয়া ব্যাপারটার সাথে কি ওর মিল আছে? নাকি হ্যালুসিনেশন কেবল আমার হয়েছিল। আমি মনের ভুলে ঐ রহস্যময়ী নারী-কে দেখেছিলাম।
অনেক প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য উসখুশ করছে ডঃ যোসেফের। কিন্তু ডাক্তাররা বলেছে আগামি তিনদিন ছেলেটার সাথে কোন কথা বলা যাবে না। নিতান্তই মিঃ যোসেফ অধৈর্য হবার যন্ত্রণায়, অপেক্ষায় থাকবার কষ্টে ভুগতে থাকল।
আর যাই হোক, ছোটবেলা থেকে এখন পর্যন্ত একটি স্বভাব ধরে রেখেছে যোসেফ। রহস্য উদঘাটন করার নেশা এই পরিণত যুবক বয়সেও তাকে ভালই চেপে ধরেছে।
যোসেফ শেষমেষ সিদ্ধান্ত নিল সবুজের জন্য তিনদিন সময় নষ্ট করা বৃথা হবে। তাই ট্যুরিজম অফিসে ফোন দিয়ে আরেকজন গাইড দেয়ার জন্য ফোন করল। যথারীতি একজন মধ্যবয়সী লোকও পাওয়া সম্ভব হল। তবে লোকটা এসে যখন ভুত প্রেতের কথা শুনতে পেল তখনই একটা চিরকুট লিখে ক্ষমা প্রার্থনা করে না জানিয়েই চম্পট দিল বেচারা।
এই ঘটনার পর ডঃ যোসেফ আজ আর ফোন দিল না ট্যুরিজম অফিসে। গাইড ছাড়াই আজ রহস্য উন্মোচনে যেতে মনস্থির করলো। তবে অবশ্যই সাথে থাকবে তার নিরাপত্তার জন্য যা যা দরকার সব।
অতিশয় ঐ বটগাছে যাওয়ার শখানেক-গজ আগে কবরস্থান ও শশ্মান। মুসলমান মুর্দার এলাকাকে কবরস্থান বলে, আর হিন্দু শবদেহের এলাকাকে বলা হয় শশ্মান। মাঝখানে দুইহাত প্রস্থের একটি সরু খাল দিয়ে পৃথক করা হয়েছে।
ডঃ যোসেফ বটগাছের নিচে যেতে রওয়ানা দিয়েছে আজ রাতে আরো আগে। কবরস্থানের পাশ দিয়ে ভয়ডরহীন একটা ভংগিমায় একমনে হেটে চলছে।
রাত একটা। চাঁদের অবস্থান এখন পশ্চিমদিক থেকে হলেও বেশ ভাল। আবছা অন্ধকার আছে। তবে বটগাছের নিচে নিশ্চয়ই তা থাকবে না। আর যাই হোক, সেদিনের মতো অন্ধকার আজ আর নেই। কিন্তু একটা শব্দ শোনা যাচ্ছে কবরস্থান থেকে।
টরর-রর, টরর-র, টরর, টরর, টরর-র।
বিভিন্ন লয়ে খটখটে এই শব্দটি স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। তাও অনিয়মিতভাবে। কিন্তু ক্রমাগত বাজছেই। এত রাতে গাছের উঁচুতে কে শব্দ করতে পারে। তাও যদি হাতুড়ি'র শব্দ কিংবা কুঠারের শব্দ হতো তবে একটা কথা ছিল। এটা মনে হচ্ছে দূর্বল হাতে কেউ গাছের ফাঁটা কান্ডের দুটো টুকরোর মধ্যে শব্দ করছে। অবশ্য তা নাও হতে পারে।
যোসেফ পাঁচমিনিটের মতো দাঁড়ালো। এর মধ্যে মাত্র দুইবার ঐ শব্দটি অনুভূত হয়েছে। সে এই ব্যাপারটা নিয়ে আর এগুতে চাইল না। নির্জন এই রাস্তায় প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে রিভলভারের অস্তিত্বে পুনঃরায় নিশ্চিত হয়ে নিল।
এরপর আবারো একবার শব্দটি শোনা গেল। টরর-রর!!!
বিষয়টা নিয়ে আর ঘাঁটাতে রাজি নয় যোসেফ। সে পুনরায় হাঁটায় মন দিল। আর বেশি দুরে নয়। ঐ-তো দেখা যাচ্ছে বিশাল জায়গা জুড়ে তমসাচ্ছন্ন করে বটগাছটি দাঁড়িয়ে রয়েছে।
প্রবল উত্তেজনার মধ্যে যোসেফ অপেক্ষা করছে। বটগাছের ঠিক নিচে। কি হতে পারে। অনতিদুরে একটি চিকন সাপ তার দিকে ধেয়ে আসল। যোসেফ স্বভাবসুলভ বুদ্ধিমানের মতই কাজ করলো। ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলো। কোন নাড়াচাড়া করলো না। সাপটি মাথা তুলে কয়েকমিনিট তার দিকে তাকিয়ে পর্যবেক্ষণ করলো। এরপর নিরীহ বেচারা ভেবে মাথা নামিয়ে এঁকেবেঁকে সর্পিল গতিতে চলে গেল।
সাপটি চোখের সামনে থেকে দুরে পাতার নিচে অদৃশ্য হয়ে যাবার পরপরই যোসেফ যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। গলা শুকিয়ে গেছে তার। জায়গাটা যে মোটেই নিরাপদ নয় সে ব্যাপারে নিশ্চিত। কিন্তু প্রাকৃতিক এইসব রহস্যের উন্মোচন কাউকে না কাউকে তো করতেই হবে। সেটা করতে গিয়ে নাহয় আমি না-ই হয়েই গেলাম।
এইসব ভেবে আর কানে পপসংগীত শুনতে শুনতে কবে যে রাত তিনটা হয়ে গেল সে টেরই পায়নি। ব্যাপার কি? ঐ নারী আজ আর আসছে না কেন?
ধীরে ধীরে আশাহত হতে হলো ডঃ যোসেফকে। এমনকি ফযরের আজানও শুনা গেল অথচ ঐ নারী আজ রাত আর আসেনি।
⇲ বস্তাপরা ভন্ডা
ডঃ যোসেফ ছায়াকুঠিরে পায়চারি করছে। সবুজ পরিপুর্ণ সুস্থ হয়ে গেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে চলে আসবে। ভালই হলো তার জন্য। নতুন গাইড আর নিতে হবে না। ক্ষতি যেটা হয়েছে সেটা হলো, মাঝখান থেকে ৩টা দিন চলে গেছে। আর তিন-তিনটি দিনের রাতগুলোই উৎকন্ঠায় কেটেছে। প্রতি রাতেই ঐ নারী'র খোঁজে সে গিয়েছিল। প্রথমদিন সাপ দেখে দ্বিতীয় দিন কার্বলিক এসিড সাথে নিয়ে গেছে। যাতে সাপ ও কিছু ছারপোকার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ না হতে হয়।
১ম দিন যে আশা ও উত্তেজনা নিয়ে সে গিয়েছিল। ২য় ও ৩য় দিনেও প্রায় সমান উৎসাহে গিয়েছে। তাও একা একা। কিন্তু ঐ রহস্যময়ী নারীর দেখা মিলেনি। তাই বলে হাল ছেড়ে দেবার পাত্র নয় যোসেফ।
ডিএনএ টেস্ট করার জন্য পায়ের ছাপ ইতিমধ্যেই জেনেভার প্রাইভেট ইনভেস্টিগেশন কোম্পানি [su]সেকলিপ[/su] বরাবর কুরিয়ার করে দিয়েছে। ওরা ল্যাবে টেস্ট করে জরুরী ভিত্তিতে তাকে আগামি এক সপ্তাহের মধ্যেই এটা কি মানুষের, নাকি এলিয়েনের, নাকি কোনও অশরীরি'র সেটা জানিয়ে দেবে।
এই কয়দিন ধরে দৈনন্দিন রুটিন বেশ উল্টো হয়ে গেছে ডঃ যোসেফ এর। রাতভর অশরীরি'র অপেক্ষা করায় ঘুমাতে হচ্ছে ভোরবেলা। আর ঘুম থেকে উঠতে উঠতে বেলা ১টা বেজে যায়। সকালবেলা ২পিস ব্রেড খেয়ে ঘুমিয়ে, ঘুম থেকে উঠে বাংলাদেশের ভাত খেতে খেতে হচ্ছে।
অবশ্য ভাত খাওয়া ব্যাপারটায় এ কদিনে বেশ ভাল লাগছে যোসেফের কাছে। প্রথম ২দিন চামচ দিয়ে খেলেও এই দুইদিন সে হাত দিয়ে খেতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে অধিক। কেয়ারটেকার আমিন সাহেব রসিকতা করে বলেছে, এভাবে খেলে কয়েক মাসে মধ্যেই নাকি যোসেফ বাঙালি হয়ে যাবে আর বাংলাদেশেই বসবাস শুরু করে দেবে।
ভর বিকেলে এই সব ভাবছিল ডঃ যোসেফ। এমন সময় ঢাকা'র যৌনবিলাস অফিস থেকে ফোন আসল। তারা হাইএসে করে মেয়ে পাঠিয়ে দিতে রাজি। ডঃ যোসেফ কেবল হ্যাঁ বললেই হলো। এখনকার মেয়ের বয়স ২০। ইউনিভার্সিটির ছাত্রী। দুই রাতের জন্য ২০ হাজার টাকা। চা, কফি খুব ভাল বানাতে পারে। ভীষণ রোমান্টিক।
ডঃ যোসেফ একদিন পর পাঠাতে বলল। এই কয়দিন শরীরের উপর দিয়ে ভালই ধকল গেছে। নিত্য দিনের রুটিন ভংগ করে অশরীরি রহস্যের সমাধানে উঠেপড়ে লেগে শরীরের অনিয়ম করা হয়েছে। মেজাজটা ভাল লাগছে না। এর মধ্যে মা ও বাবা তার বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। মুখের ওপর ড্যাডিকে "ফাক অফ" বলে ফোনটা রেখে দিল।
এরপর থেকে ২-৩ দিন বাসা থেকে আর ফোন আসবে না তাতে সে নিশ্চিত। এর আগেও এমনটি ঘটিয়েছে ডঃ যোসেফ। সে যে ভীষণ একগুঁয়ে সেটা ওর মা-বাবা ভালই জানে।
এইসময় সিংহদরজায় বেশ শোরগোল শোনা গেল। বিশেষ করে দুজন লোকের কন্ঠস্বর বেশ উচ্চ। মনে হচ্ছে কোনও গোলযোগ বেঁধেছে। হয়ত গ্রামের লোকেরা এসে গন্ডগোল বাঁধানোর চেষ্টা করছে। সে এটা ডেইলি স্টার পত্রিকা পড়ে জেনেছে। গ্রামের স্থানীয় মানুষরা তার অবস্থানকে ভাল চোখে দেখছে না।
প্যান্টের পকেটে রিভলবারটার অবস্থান নিশ্চিত করে সে কি হচ্ছে তা দেখতে গেল। কিন্তু এ-কি!
মাত্র ২জন মানুষ! এও কি সম্ভব? মনে হচ্ছিল অনেক মানুষ এখানে গন্ডগোল পাঁকিয়েছে। সে ঝগড়ারত দারোয়ানকে চেনে। ওকে থামাতে সে ভাঙা বাংলায় বললো "টু-মি ঠামো। আ-মি ডেখচি। প্লিজ স্টপ।"
কি মনে করে দারোয়ান থামল। আর যোসেফ তখনই ঐ লোকটির দিকে একবার ভাল করে দেখল। লোকটির গায়ে পুরনো পাটের বস্তা। মনে হচ্ছে ফকির/সাধু টাইপের কেউ হবে। একটা বস্তা দিয়ে কোনক্রমে কোমরে জড়িয়ে রেখেছে দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখে। আরেকটা বস্তা কেটে টি শার্টের মতো করে গায়ে জড়িয়ে রেখেছে। মুখের ত্বক খটখটে রুক্ষ। গাল দুটি একটু ভেতরে ঢুকে গেছে যে পুষ্টির অভাবে তা ঢের বোঝা যায়। তবে বলিষ্টদেহী লোক, ভেতরে যে একটা প্রাকৃতিক পেশিশক্তি বিদ্যমান তা ঢের বোঝা যাচ্ছে।
মানানসই তো দুরে থাক। অদ্ভুত একটা প্রাণি মনে হচ্ছে একে। চুল কোঁকড়া এবং ঘাড়ের উপর পতিত। অনেক চুল থাকলে কি হবে, সবগুলোই ময়লা আর দেখতে বিশ্রি লাগছে সীমাহীন অযত্নের কারণে। এমনকি, অনেক চুল জট লেগে চামড়ার সাথে একিভূত হয়ে গেছে মনে হয়। গা থেকে পঁচা ফলমূলের মতো দুর্গন্ধ বেরুচ্ছে।
নাক চেপে একটু দুরে দাঁড়াল ডঃ যোসেফ। এরপর জিজ্ঞেস করল-
"অ্যাই য্যা, টুমি কি সাউ?"
"শয়তানের বাচ্চা। দুর হ এখান থেকে। তোকে আমি শেষবারের মতো নিষেধ করলাম। ঐ বটগাছের নিচে যদি যাবি তো দেবী তোরে কিচকিচ করে কেটে ফেলবে। ভালয় ভালয় চলে যা। যেখান থেকে এসেছিস, সেখানেই চলে যা।"
হাতে থাকা ফোন দিয়ে হোয়াটসএপে রেকর্ড করে সবুজের কাছে এটা সে পাঠিয়ে দিল। সবুজ আসতে আরো কিছুক্ষণ লাগবে। গাড়িতে বসেই সে ভয়েস মেসেজ দিয়ে বুঝিয়ে দিল যে এই ভন্ডা লোকটি সাধুবেশে কি করতে এসেছে।
সাথে সাথে রিভলবার বের করে ওকে আঁটকাল। আর দারোয়ানকে বলল যে, একে বেঁধে ফেল। দারোয়ানও তড়িৎ গতিতে গার্ডরুম থেকে তৎকনাৎ একটি দড়িও নিয়ে এসে পড়ল। বেটা আর যায় কোথায়?
⇲ ত্রিমাত্রিকার দাদা!
ত্রিমাত্রিকার দাদা ছিলেন নাস্তিক। তিনি স্বশিক্ষিত লোক ছিলেন। কোনও শিক্ষা প্রতিষ্টানে শিক্ষাগ্রহণ করেন নি। তবে নানান বইপত্র যোগাড় করে পড়তে পারতেন। নিজের নাম জীবন চন্দ্র ঠাকুর থেকে জীবন শাস্ত্রজ্ঞ রেখেছিলেন। তিনি কেন এই কাজ করেছেন তা নিয়ে গাঁয়ের হিন্দু মুসলিম তেমন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। তবে ব্রাম্মণ পুরোহিত সুভাস চক্রবর্তী একঘরে করে রেখেছিল তাকে।
ত্রিমাত্রিকার দাদী অবশ্য স্বধর্মদ্রোহী আখ্যায়িত করে বাড়ি থেকে বের করে দেয় তাকে। এরপর তার শেষ আশ্রয় হয় পরিত্যাক্ত পোড়াবাড়িতে। অভিশপ্ত বটগাছটির অবস্থানের কারণে একসময়ের ধনী ব্রাম্মণ পরিবার এই বাড়িটি ছেড়ে চলে যায়। কেউ কিনেও এই বাড়ি। তবে সম্পত্তিসুত্রে এই বাড়িটির এখনকার মালিক জীবন শাস্ত্রজ্ঞ।
ত্রিমাত্রিকার জীবন দাদাভাই একা একা জীবনচারণে খুব পটু ছিলেন। এমনিতেই তিনি মানুষের মনের কথা বলে দিতে পারতেন। মানুষেরা অবাক হতো। অনেক মানুষ তাকে পীরের মতো শ্রদ্ধা করে। তবে তাঁর মত গ্রহণের জন্য কাউকেই বলেন না। তবে লোকমুখে শোনা যায় এই বুড়োটা শয়তানেরই একটা চেলা। শয়তান মানুষকে ভগবান/খোদা থেকে বিমুখ করার জন্যই নাকি এই লোককে পাঠিয়েছে।
প্রতিদিন কেউ না কেউ উপঢৌকন নিয়ে আসে। রান্না করা খাবার নিয়ে আসে পোড়াবাড়িতে। গেল ২ বছর হলো একটি দিনও জীবন বাবুকে কোন খাবার রান্না করতেই হয়নি। লোকেরা উনাকে রান্না করে খাবার নিয়ে আসে টিফিনে করে কিংবা বক্সে করে। তারা মনে করে উনি আধ্যাত্মিক ক্ষমতাসম্পন্ন। যদিও তিনি না করেন বরাবর।
আশ্চর্যের কথা হলো এই বুড়ো বয়সেও তিনি কম্পিউটার-ই কেবল না, ইন্টারনেট চালাতে জানেন। এই ব্যাপারটি মেয়েটি তার বন্ধুদের কাছে গর্বভরে বলতে পারে।
সে ভারতের আসাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে Botany -তে মাস্টার্স শেষ করে এসেছে। দাদার কথামতো বিয়ে না করে পড়াশুনা করতে পেরে খুব ভাল লাগছে। তবে কেউ-ই জানে না, এই মেয়েটি ঢাকায় থেকে থেকে যে পড়ালেখা শেষ করে ফেলেছে। গ্রামের লোকেরা বলে আমাদের গ্রামে পড়াশুনার দরকার নাই। কেউ-ই মেট্রিক পাস করতে পারে নাই। সবাই গাধা।
এই ব্যাপারগুলো নিয়ে অবশ্য দাদাভাইয়ের মতো ত্রিমাত্রিকা তেমন মাথা ঘামায় না। সে বাড়ি এসে সোৎসাহে ঘুরে বেড়াচ্ছে। গ্রামের মানুষের আড়ালে আবডালে কথা শুনে সে বেশ উপভোগ করে।
আজ ত্রিমাত্রিকা দাদার সাথে দেখা করবে। বিকেলবেলা শোবার ঘরে তিনি তখন পান চিবুচ্ছিলেন ঠিক তখনই হুট করে দাদার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। দাদা চমকে উঠে বললেন "তিমা! তুই? কবে এলি?"
"এইতো দাদা। কালই এলাম। শরীর ভাল?"
জীবন বাবু তার বুড়ো বয়সের সিনা টান করে বললেন। "এই দেখ ফিট আছি। হাঃ হাঃ হাঃ"।
দাদার কথায় তিমা হেসে বললো- "কিন্তু একটা দুঃসংবাদও আছে দাদা।"
"কি দুঃসংবাদ?"
"আমাকে কালই যেতে হবে। ভার্সিটি থেকে মেইল এসেছে। আমি তাড়াহুড়ো করে চলে আসাটা ঠিক হয়নি।"
এই সময় একটা তিমার মতই একটি মেয়ে হনহন করে এসে ঘরে ঢুকে পড়ল। তবে চোখ কপালে উঠতে সময় লাগেনি।
- কি ব্যাপার মশাই? আমাকে কি আর লাগবে না?
ত্রিমাত্রিকার দাদা থতমত খেয়ে গেলেন। তিমা'র বুদ্ধিমত্তা অতো খারাপ না যে, সে বুঝতে পারবে না। হনহন করে মেয়েটি বেরিয়ে গেল।
এদিকে মন খারাপ করে আসাম চলে এসেছে তিমা। সে নিজে যা-ই হোক, ছোটবেলা থেকে দাদাকে দেখে কিছু শেখার, প্রেরণা নেবার চেষ্টা করেছে। তার সেই দাদা যে এত লুইচ্চা, একটা বদমাশ, সেটা জেনে সে সীমাহীন দুঃখ পেয়েছে। ভুল স্বীকার করলেও অনেক কষ্ট কম হতো। কিন্তু তা-না, উনি জাস্টিফাই করার চেষ্টা করছেন। মুসলমানের মেয়ে বৈশ্যা লিটা'র সাথে তিনি বিছানায় যান। দুঃখে আত্মহত্যা করার ইচ্ছে হচ্ছে তিমা'র।
মেয়েদের জন্য আলাদা হোস্টেলে আছে, আর ম্যাথিউস উইমেন্স হোস্টেলে থাকে তিমা। ফোনটা হাতে নিয়ে ডায়াল করলো একটি নাম্বারে।
⇲ বিবসনা নারী
শীতকাল শেষ না হলেও ঠান্ডা, প্রচুর ঠান্ডা এই পুর্ণিমা রাতে। আরজমোল্লা তার নাদুস নুদুস শরীরে বাইসাইকেল চালিয়ে আছাদৌল্লার দিকে যাচ্ছেন।
আকাশ পরিস্কার, পুর্ণিমা রাতের এ আসমান যেন সাদা কালো কোন অপরুপ ছবি। কুয়াশার ফোঁটা ফোঁটা বিন্দু পড়ছে। গাছের পাতা বেয়ে বড় বড় হিম বিন্দু পড়ছে নিচে। মাঝে মাঝেই ঠান্ডা দমকা হাওয়া এসে শীতের তীব্রতা বাড়িয়ে দেয়।
বাইসাইকেল চালাতে চালাতে পোড়োবাড়ি পেরিয়ে বটগাছের সামনে দুরু দুরু বুকে এসে যেটার ভয় করেছিলেন ঠিক সেটাই আজ তার কাল হয়ে দাঁড়াল। আপাদমস্তক নগ্ন। হাতে কালো গ্লাভস। পায়ে কালো বুট।
"লা, হাউলা উলা কুয়াত্তা ইললা বিল্লা"।
আরজ মোল্লা জীন ভুত তাড়ানোর দোয়া ভালই পারেন। কিন্তু আজকের এই প্রেত তো চোখের সামনে থেকে যাচ্ছে না। এটাকে দেখতে ব্লু ফিল্মে দেখা ফিরিংগী দেহপসারিনীর মতো মনে হচ্ছে। জীন ভুত হলে তো এতক্ষণে ভস্ম হয়ে যেত। সবচেয়ে কঠিন দোয়া পড়েছেন তিনি। শরীর বন্ধও করেছেন ইতিমধ্যে। কিন্তু কোনই তো লাভ হচ্ছে না। আরজ মোল্লা এতক্ষণে নিশ্চিত যে, এটা কোন জ্বীন পরী নয়। মানুষই।
ভয়বিহব্বল চোখে আরজমোল্লা তাকালেন, স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে ফিরিংগী কোন মেয়ে। তিনি তার বিদেশী টর্চলাইট-টি সাথে আছে কি-না সাইকেলের ব্যাকসিটে দেখে নিলেন। আছে দেখে ঐটা-ই একমাত্র সম্বল হিসেবে নিয়ে এগুতে থাকলেন। এটা কতটুকু কাজে লাগবে কে জানে।
আচমকা ঐ ফিরিংগী নারী ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে তাকাল। চাঁদের আলতো নীল জোসনা সরাসরি তার মুখে পড়েছে। আরজ মোল্লা তার ৩০ বৎসরের জীবনে দেখেনি এইরকম ভয়ংকর সুন্দর মুখ। নীল চোখের মণি অথচ শার্দুলের ন্যায় দৃষ্টি। মাথার উপরিদেশ থেকে বেশ কয়েক গাছি চুল চেহারার উপরে পতিত। মুখাবয়বের ইঞ্চি ইঞ্চি ত্বক থেকে যেন অদ্ভুত মায়াময় শক্তশালী বৈদ্যুতিক আকর্ষণ শক্তি তাঁকে টেনে চলেছে।
সুগঠিত স্তন, উভয় বাহুর টানটান পেশিতন্তু যেন এক বিপর্যয়ের আহবান জানাচ্ছে তাকে। দেহের কোন অংশে একটি সুতোও নেই। জোৎস্নার আলোয় আজ অভিসারের উদ্দ্যেশ্যেই যেন বের হয়েছে এই আত্মঅশ্লীল নারী।
এক পা দুই পা করে ধীরে ধীরে ঐ নারী এগুচ্ছে। ভয়, কৌতুহল, উত্তেজনা মিশ্রিত অভুতপুর্ব অনুভুতি নিয়ে স্তদ্ধ হয়ে অপেক্ষা করতে লাগলেন আরজন মোল্লা। দুনিয়ার তাবৎ জায়গা সংকুচিত হয়ে গেছে আরজ মোল্লার কাছে। মনে হচ্ছে এই বটগাছের নীচই পৃথিবী। এত ছোট হয়ে গেল কেন এই দুনিয়া? অন্তত এই মুহুর্তের জন্য।
বিবসনা নারী এসেই নিচু হয়ে তার মাথা থেকে টুপি সরিয়ে পাশে ছুঁড়ে ফেলে দিল। এরপর জোর করে মাটিতে আলতো করে ফেলে ঝাঁপিয়ে পড়ল। আরজ মোল্লার মনে হলো বিষাক্ত ঠোঁট তার ঠোঁটকে গিলে ফেলছে।
আরজ মোল্লা কিছুতেই না করতে পারলেন না। এ শীতের মধ্যে দেহ থেকে জ্যাকেট, পাঞ্জাবী, পায়জামা সহ সব পোশাক খুলে নিয়ে চারদিকে ছুঁড়ে ফেলতে লাগল ঐ নারী। কিন্তু আরজ মোল্লা এখনো আশ্বস্ত হতে পারছে না তার জীবনে এ কি ঘটতে চলেছে।
তিনি অনুভব করতে থাকলেন তাঁর মষ্তিষ্কে একটা ঘোর লাগা কাজ করছে। চিন্তা করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। এই খারাপ নারী তাঁর চিন্তাশক্তিকে গ্রাস করে ফেলেছে।
এটা একটি স্বপ্ন ভাবার প্রাণপণ চেষ্টা করতে থাকল। কিন্তু প্রচন্ড ঝড়ে পড়ে যদি কেউ চোখ বন্ধ করে তবে কি আদৌ ঝড় বন্ধ হয়ে যায়?
আরজ মোল্লার জীবনে কি কি পাপ করেছেন সেটা চিন্তা করতে করতে আচমকা টের পেলেন তার শিশ্নমুণ্ডে ঐ নারীর সম্মুখভাগের ধারাল দাঁত বসিয়ে দিয়েছে।
"মা-গো" "আল্লাহ গো" বলে চিৎকার দিয়ে উঠলেন আরজ মোল্লা। ততক্ষণে ফিনকি দিয়ে কয়েকটি ধারায় উষ্ণ রক্ত বের হওয়া শুরু করেছে। উত্তেজিত অবস্থায় তাঁর শিশ্নের আয়তন বেড়ে গিয়েছিল। দেহের রক্ত চলাচল ছিল দ্রুত। শিরায় শিরায় ছিল নতুন ও অনিন্দ্য সুন্দরী ফিরিংগী রুপসী কোন নারীর সাথে অভিসারের সংকল্প। আর সে কারণেই রক্তবিন্দুগুলো যেন খাঁচা থেকে ছাড়া পেয়ে উর্ধশ্বাসে দৌড়াচ্ছে ঐ বিশেষ মাংসপিন্ড থেকে।
রান্না করা মাংসের মতো করে তার শিশ্ন চর্বনের কিচকিচ করে খেতে লাগল ঐ নারী। এরপর পাশ থেকে একটা মাটির বড় দলা নিয়ে মোল্লার মাথার দিকে ছুঁড়ে দিয়ে দু পা ছড়িয়ে একটা টিবির ওপর বসে গেল শিশ্নখেকো ঐ রহস্যময়ী নারী।
⇲ ত্রিমাত্রিকার দুর্ঘটনা
২৫ মার্চ। ত্রিমাত্রিকার আজ জন্মদিন। পৃথিবীতে খুব কম মানুষই বোধহয় আছে যাদের কাছে নিজের জন্মদিনের মতো বিরক্তিকর ও অসহ্যকর দিন নেই। বছরের এই বিশেষ দিনে অন্যদের জন্য আনন্দ ও উৎসবের থাকলেও তিমা'র জন্য সেটা মোটেও সুখের নয়। কয়েকবার আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছে, যাতে পুনঃজন্ম নিয়ে আবার আসা যায়।
জন্মদিন হলেও তিমার জীবনে ২৫ মার্চ বিভীষীকাময়। তিমা'র জীবনে ঘটে যাওয়া ভয়ংকর ও নির্মমতর দিন এটা। আছাদৌল্লা উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় তাঁর জন্য সময় ছিল পাখির মতো ফুড়ুৎ করে উড়ে যাওয়া।
ওর কালো ডায়েরি'টা খুলে দেখে প্রতি জন্মদিনে।
ঐ দিন জন্মদিন উপভোগ করা হয়েছিল আনন্দের সাথে এবং সর্বোচ্চ জাঁকজমক করে। সবাই চলে গিয়েছিল প্রায় এমন সময় আচমকা কালবৈশাখী আঘাত হানে। বেশ বৃষ্টি হয় ঐ রাতে। তার বন্ধুদের নিজের বাড়িতে যাওয়ার সূযোগ ছিল না যে তা নয়। অনেকেরই ছিল। চারজন বন্ধু, সে আর লতা মিলে অপেক্ষা করছিল বৃষ্টি শেষ হবার জন্য।
রাত ১টা বেজে গেল অথচ গুড়িগুড়ি বৃষ্টি শেষ হয়নি। অগত্যা সবাই মিলে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিল। কোনমতে সবাই ঘুমিয়ে পড়ল।
ভয়াল রাতের ঘটনার তখনো শুরু হয়নি। রাত ৪টার দিকে তিমা টের পেল ডিভিডি প্লেয়ারে কিছু একটার শব্দ। অত্যন্ত অপরিচিত শব্দ। এদিকে বিদ্যুত চলে এসেছে।
তিমা তখন উঠে ড্রয়িংরুমে এসে দেখে তার বন্ধুরা না ঘুমিয়ে নগ্ন ভিডিও দেখছে। সে এই অদ্ভুত ব্যাপারটির সাথে পরিচিত নয়। ওরা চমকে গেলেও তিমা'কে ২ মিনিট দেখার জন্য অনুরোধ করল।
তিমা ১মিনিট দেখেই চলে গিয়েছিল। কিন্তু গিয়ে আর ঘুমোতে পারল না। পাশে ঘুমানো লতাকে ডেকে বলল আয় দেখ ওরা কি করছে।
নাহঃ আর পড়তে পারছে না। এর চেয়ে থ্রি এক্স দেখে এই রাতটি কাটানো অনেক ভাল। লতা আর তিমা দুজনেই আসামে এসে পড়াশুনা করেছে। আসাম থেকে মায়ং বেশি দুরে নয়। ওখান থেকে কালো জাদুতে পারদর্শীতা অর্জন করেছে লতা।
⇲ পোড়াবাড়িতে
সবুজ সুস্থ হওয়ার চারদিন পর থেকেই তারা ঐ বটগাছের নিচে শীতের ভারী কাপড় চোপড় পরে অ্যাডভেঞ্চারের উদ্দ্যেশ্যে যাচ্ছেন। কিন্তু ছয়দিন হয়ে গেল এখনো কোন অশরীরি/মানবী'র পাত্তা পাওয়া যায় নি।
সবুরে যে মেওয়া ফলে সে-কথা মিছে না। তাদের প্রত্যাশাকে ফেলনা না করে হঠাৎ একদিন ঐ রহস্যময়ী নারী আবির্ভূত হল। একা একা ঘুরছে। কোন ভয় ডর কিছুই নেই।
এত গভীর রাতে একা একা কি করে রাস্তার পাশে টিলাময় জায়গায় একটা নারী বিবস্ত্র হয়ে হাঁটতে পারে সেটা চিন্তা করে সবুজ প্রায় মুর্ছা গেল। কিন্তু ডঃ যোসেফ একদম স্বাভাবিক। তাকে চুপ থাকার ইংগিত করে বললেন, এখানেই বসে থাকো। আর এয়ারফোনের সাহায্যে আমার সাথে কথা বলবে।
সবুজ অপেক্ষা করতে থাকল। এর মধ্যে জ্বলজ্বলে চাঁদের নিচ দিয়ে তার চোখের সামনে কত যে মেঘমালা হেসে খেলে চলে গেল। অবশ্য সবুজ এগুলো গুনছে না। শুধু দেখছে। পাশের গোরস্তান থেকে উচ্চস্বরে একটা আওয়াজ তার অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে তুলল। "খু-উ---উ, খু-উৎ খু-উৎ"।
এছাড়া আর বিশেষ কোন শব্দ শোনা না গেলেও ভয়ে ভেতরটা সংকীর্ণ হয়ে গেছে সবুজের। মনে হচ্ছে আজই কোন দেও এসে তার মুন্ডুপাৎ করে নিবে। আকাশে এত সুন্দর চাঁদ অথচ পৃথিবীটা অশরীরি'র যন্ত্রণায় বেঁচে থাকাই দায়।
যাইহোক, অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরও যখন সাড়া পেল না, অগত্যা নিজের উদ্যোগেই ডঃ যোসেফকে খুঁজতে বের হল। এদিক ওদিক খুঁজে কোন পাত্তাই পাওয়া গেল না। না আছে ঐ নারী না আছে ডঃ যোসেফ।
সবুজের মনে আশংকা বাড়ছে। সে প্রতিজ্ঞা করে নিল, কোনক্রমে এ যাত্রায় বেঁচে গেলে ভুলেও আর আসবে না। বুকে বল রেখে সে গোরস্তানেও খুঁজল। এই বিদেশী লোকটা'র সাহস এত বেশি কেন, সেটা ভেবে মাথাও অনেকটা গরম হতে লাগল সবুজের।
বটগাছ পেরিয়ে একটা পরিত্যক্ত পোড়াবাড়ি আছে। এটাই কেবল বাকি আছে। এই নিশুতি রাতে এখানেও যেতে হবে ভেবে গাঁ ছরফর করে কাঁটা দিয়ে ওঠলো। না জানি নিজের জীবনটাই না খোয়াতে হয়।
ইতস্ত করতে করতে সবুজ শেষমেষ ঐ পোড়াবাড়িতেই ঢুকে পড়ল। নিজেকে সে একজন গোয়েন্দা ভাবছে। ডক্টরকে উদ্ধার করাই তার আপাতত মিশন।
বাড়িটা বিশাল। প্রাচীর অনেক জায়গায় ভাংগা থাকলেও অনেক ঘর আছে বেশ মজবুত। শ্যাওলা জমে বাড়ি'ট শ্রী নষ্ট হয়েছে বহু আগেই। প্যানিসিলিয়ামের রাজত্ব ইটের গায়ে গায়ে। মাঝে মধ্যেই ঝোপঝাঁড়।
হঠাৎ সামনে একটা জ্যাকেট দেখে আরেকবার গা কাঁটা দিয়ে ওঠল। এটা তো ডক্টরেরই। তাহলে কি ওকে গুম করে ফেলেছে?
নিজের প্রশ্নের উত্তর পেতে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি সবুজের।
আরো কিছুদুর এগুনোর পর একটা আঙিনা পেল সে। ওখানেই একটা উলংগ মানবদেহ পাওয়া গেছে। এটাই ডঃ যোসেফ। কিন্তু নির্জীব।
⇲ দুর্যোগ
গ্রামের সবাই ছিল নিরব। তাদেরকে দু-দলই ডেকেছিল। কিন্তু গ্রামের একটা মানুষও যায়নি। সরকারি দলের দুটি গ্রপ বটগাছ থাকার পক্ষে ও বিপক্ষে মারামারি করেছে। ৪জন নিহত, ৩ জন গুরুতর আহত, আর অনেকেই আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ।
পুলিশের এসআই দিলীপ ভট্টাচার্য তার প্লাটুন নিয়ে নিষ্ক্রিয় দর্শকের ভুমিকা পালন করেছেন বলে ক্ষোভ উঠেছে। এর সাথে দর্শক হিসেবে ছিল সাধারণ মানুষ।
বটগাছটি কাঁটা যায়নি। তবে খুনোখুনি হয়েছে। জাতীয় পত্রিকায় হেডলাইন হয়ে গেল এই ঘটনা। খবরে আরো বের হয়েছে, সুইজারল্যান্ডের নাগরিক ডঃ যোসেফ এই ঘটনার আগে দিন অসুস্থ অবস্থায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। এটা নিয়ে ব্যাপক গুজব ছড়িয়ে আছে। অনেকেই বলছেন, এই লোকটি দুই দলের মধ্যে মারামারি লাগিয়ে নিজে পগার পার হয়ে গেছে। মুসলামানদের মধ্যে মারামারি ঘটানোর জন্য সিআইএ/এফবিআই/মোসাদ তাকে বাংলাদেশে পাঠিয়েছিল।
অস্থিরতার রেশ কাটতে না কাটতে আরেকটি ঘটনা ঘটে গেল। ডঃ যোসেফের গাইড সবুজকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। তার নিজের বাড়িতেই।
শান্তির দেশে সংবাদপত্রের যে সংবাদশুন্যতা ছিল সেটা কেটে গেছে অচিরেই। একটি বটগাছকে কেন্দ্র করে কতশত ঘটনা দেশে যে, ঘটে গেল সেটা অকল্পনীয় ব্যাপার।
(চলবে)
⇲ ত্রিমাত্রিকার দাদা!
ত্রিমাত্রিকার দাদা ছিলেন নাস্তিক। তিনি স্বশিক্ষিত লোক ছিলেন। কোনও শিক্ষা প্রতিষ্টানে শিক্ষাগ্রহণ করেন নি। তবে নানান বইপত্র যোগাড় করে পড়তে পারতেন। নিজের নাম জীবন চন্দ্র ঠাকুর থেকে জীবন শাস্ত্রজ্ঞ রেখেছিলেন। তিনি কেন এই কাজ করেছেন তা নিয়ে গাঁয়ের হিন্দু মুসলিম তেমন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। তবে ব্রাম্মণ পুরোহিত সুভাস চক্রবর্তী একঘরে করে রেখেছিল তাকে।
ত্রিমাত্রিকার দাদী অবশ্য স্বধর্মদ্রোহী আখ্যায়িত করে বাড়ি থেকে বের করে দেয় তাকে। এরপর তার শেষ আশ্রয় হয় পরিত্যাক্ত পোড়াবাড়িতে। অভিশপ্ত বটগাছটির অবস্থানের কারণে একসময়ের ধনী ব্রাম্মণ পরিবার এই বাড়িটি ছেড়ে চলে যায়। কেউ কিনেও এই বাড়ি। তবে সম্পত্তিসুত্রে এই বাড়িটির এখনকার মালিক জীবন শাস্ত্রজ্ঞ।
ত্রিমাত্রিকার জীবন দাদাভাই একা একা জীবনচারণে খুব পটু ছিলেন। এমনিতেই তিনি মানুষের মনের কথা বলে দিতে পারতেন। মানুষেরা অবাক হতো। অনেক মানুষ তাকে পীরের মতো শ্রদ্ধা করে। তবে তাঁর মত গ্রহণের জন্য কাউকেই বলেন না। তবে লোকমুখে শোনা যায় এই বুড়োটা শয়তানেরই একটা চেলা। শয়তান মানুষকে ভগবান/খোদা থেকে বিমুখ করার জন্যই নাকি এই লোককে পাঠিয়েছে।
প্রতিদিন কেউ না কেউ উপঢৌকন নিয়ে আসে। রান্না করা খাবার নিয়ে আসে পোড়াবাড়িতে। গেল ২ বছর হলো একটি দিনও জীবন বাবুকে কোন খাবার রান্না করতেই হয়নি। লোকেরা উনাকে রান্না করে খাবার নিয়ে আসে টিফিনে করে কিংবা বক্সে করে। তারা মনে করে উনি আধ্যাত্মিক ক্ষমতাসম্পন্ন। যদিও তিনি না করেন বরাবর।
আশ্চর্যের কথা হলো এই বুড়ো বয়সেও তিনি কম্পিউটার-ই কেবল না, ইন্টারনেট চালাতে জানেন। এই ব্যাপারটি মেয়েটি তার বন্ধুদের কাছে গর্বভরে বলতে পারে।
সে ভারতের আসাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে Botany -তে মাস্টার্স শেষ করে এসেছে। দাদার কথামতো বিয়ে না করে পড়াশুনা করতে পেরে খুব ভাল লাগছে। তবে কেউ-ই জানে না, এই মেয়েটি ঢাকায় থেকে থেকে যে পড়ালেখা শেষ করে ফেলেছে। গ্রামের লোকেরা বলে আমাদের গ্রামে পড়াশুনার দরকার নাই। কেউ-ই মেট্রিক পাস করতে পারে নাই। সবাই গাধা।
এই ব্যাপারগুলো নিয়ে অবশ্য দাদাভাইয়ের মতো ত্রিমাত্রিকা তেমন মাথা ঘামায় না। সে বাড়ি এসে সোৎসাহে ঘুরে বেড়াচ্ছে। গ্রামের মানুষের আড়ালে আবডালে কথা শুনে সে বেশ উপভোগ করে।
আজ ত্রিমাত্রিকা দাদার সাথে দেখা করবে। বিকেলবেলা শোবার ঘরে তিনি তখন পান চিবুচ্ছিলেন ঠিক তখনই হুট করে দাদার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। দাদা চমকে উঠে বললেন "তিমা! তুই? কবে এলি?"
"এইতো দাদা। কালই এলাম। শরীর ভাল?"
জীবন বাবু তার বুড়ো বয়সের সিনা টান করে বললেন। "এই দেখ ফিট আছি। হাঃ হাঃ হাঃ"।
দাদার কথায় তিমা হেসে বললো- "কিন্তু একটা দুঃসংবাদও আছে দাদা।"
"কি দুঃসংবাদ?"
"আমাকে কালই যেতে হবে। ভার্সিটি থেকে মেইল এসেছে। আমি তাড়াহুড়ো করে চলে আসাটা ঠিক হয়নি।"
এই সময় একটা তিমার মতই একটি মেয়ে হনহন করে এসে ঘরে ঢুকে পড়ল। তবে চোখ কপালে উঠতে সময় লাগেনি।
- কি ব্যাপার মশাই? আমাকে কি আর লাগবে না?
ত্রিমাত্রিকার দাদা থতমত খেয়ে গেলেন। তিমা'র বুদ্ধিমত্তা অতো খারাপ না যে, সে বুঝতে পারবে না। হনহন করে মেয়েটি বেরিয়ে গেল।
এদিকে মন খারাপ করে আসাম চলে এসেছে তিমা। সে নিজে যা-ই হোক, ছোটবেলা থেকে দাদাকে দেখে কিছু শেখার, প্রেরণা নেবার চেষ্টা করেছে। তার সেই দাদা যে এত লুইচ্চা, একটা বদমাশ, সেটা জেনে সে সীমাহীন দুঃখ পেয়েছে। ভুল স্বীকার করলেও অনেক কষ্ট কম হতো। কিন্তু তা-না, উনি জাস্টিফাই করার চেষ্টা করছেন। মুসলমানের মেয়ে বৈশ্যা লিটা'র সাথে তিনি বিছানায় যান। দুঃখে আত্মহত্যা করার ইচ্ছে হচ্ছে তিমা'র।
মেয়েদের জন্য আলাদা হোস্টেলে আছে, আর ম্যাথিউস উইমেন্স হোস্টেলে থাকে তিমা। ফোনটা হাতে নিয়ে ডায়াল করলো একটি নাম্বারে।
⇲ বিবসনা নারী
শীতকাল শেষ না হলেও ঠান্ডা, প্রচুর ঠান্ডা এই পুর্ণিমা রাতে। আরজমোল্লা তার নাদুস নুদুস শরীরে বাইসাইকেল চালিয়ে আছাদৌল্লার দিকে যাচ্ছেন।
আকাশ পরিস্কার, পুর্ণিমা রাতের এ আসমান যেন সাদা কালো কোন অপরুপ ছবি। কুয়াশার ফোঁটা ফোঁটা বিন্দু পড়ছে। গাছের পাতা বেয়ে বড় বড় হিম বিন্দু পড়ছে নিচে। মাঝে মাঝেই ঠান্ডা দমকা হাওয়া এসে শীতের তীব্রতা বাড়িয়ে দেয়।
বাইসাইকেল চালাতে চালাতে পোড়োবাড়ি পেরিয়ে বটগাছের সামনে দুরু দুরু বুকে এসে যেটার ভয় করেছিলেন ঠিক সেটাই আজ তার কাল হয়ে দাঁড়াল। আপাদমস্তক নগ্ন। হাতে কালো গ্লাভস। পায়ে কালো বুট।
"লা, হাউলা উলা কুয়াত্তা ইললা বিল্লা"।
আরজ মোল্লা জীন ভুত তাড়ানোর দোয়া ভালই পারেন। কিন্তু আজকের এই প্রেত তো চোখের সামনে থেকে যাচ্ছে না। এটাকে দেখতে ব্লু ফিল্মে দেখা ফিরিংগী দেহপসারিনীর মতো মনে হচ্ছে। জীন ভুত হলে তো এতক্ষণে ভস্ম হয়ে যেত। সবচেয়ে কঠিন দোয়া পড়েছেন তিনি। শরীর বন্ধও করেছেন ইতিমধ্যে। কিন্তু কোনই তো লাভ হচ্ছে না। আরজ মোল্লা এতক্ষণে নিশ্চিত যে, এটা কোন জ্বীন পরী নয়। মানুষই।
ভয়বিহব্বল চোখে আরজমোল্লা তাকালেন, স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে ফিরিংগী কোন মেয়ে। তিনি তার বিদেশী টর্চলাইট-টি সাথে আছে কি-না সাইকেলের ব্যাকসিটে দেখে নিলেন। আছে দেখে ঐটা-ই একমাত্র সম্বল হিসেবে নিয়ে এগুতে থাকলেন। এটা কতটুকু কাজে লাগবে কে জানে।
আচমকা ঐ ফিরিংগী নারী ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে তাকাল। চাঁদের আলতো নীল জোসনা সরাসরি তার মুখে পড়েছে। আরজ মোল্লা তার ৩০ বৎসরের জীবনে দেখেনি এইরকম ভয়ংকর সুন্দর মুখ। নীল চোখের মণি অথচ শার্দুলের ন্যায় দৃষ্টি। মাথার উপরিদেশ থেকে বেশ কয়েক গাছি চুল চেহারার উপরে পতিত। মুখাবয়বের ইঞ্চি ইঞ্চি ত্বক থেকে যেন অদ্ভুত মায়াময় শক্তশালী বৈদ্যুতিক আকর্ষণ শক্তি তাঁকে টেনে চলেছে।
সুগঠিত স্তন, উভয় বাহুর টানটান পেশিতন্তু যেন এক বিপর্যয়ের আহবান জানাচ্ছে তাকে। দেহের কোন অংশে একটি সুতোও নেই। জোৎস্নার আলোয় আজ অভিসারের উদ্দ্যেশ্যেই যেন বের হয়েছে এই আত্মঅশ্লীল নারী।
এক পা দুই পা করে ধীরে ধীরে ঐ নারী এগুচ্ছে। ভয়, কৌতুহল, উত্তেজনা মিশ্রিত অভুতপুর্ব অনুভুতি নিয়ে স্তদ্ধ হয়ে অপেক্ষা করতে লাগলেন আরজন মোল্লা। দুনিয়ার তাবৎ জায়গা সংকুচিত হয়ে গেছে আরজ মোল্লার কাছে। মনে হচ্ছে এই বটগাছের নীচই পৃথিবী। এত ছোট হয়ে গেল কেন এই দুনিয়া? অন্তত এই মুহুর্তের জন্য।
বিবসনা নারী এসেই নিচু হয়ে তার মাথা থেকে টুপি সরিয়ে পাশে ছুঁড়ে ফেলে দিল। এরপর জোর করে মাটিতে আলতো করে ফেলে ঝাঁপিয়ে পড়ল। আরজ মোল্লার মনে হলো বিষাক্ত ঠোঁট তার ঠোঁটকে গিলে ফেলছে।
আরজ মোল্লা কিছুতেই না করতে পারলেন না। এ শীতের মধ্যে দেহ থেকে জ্যাকেট, পাঞ্জাবী, পায়জামা সহ সব পোশাক খুলে নিয়ে চারদিকে ছুঁড়ে ফেলতে লাগল ঐ নারী। কিন্তু আরজ মোল্লা এখনো আশ্বস্ত হতে পারছে না তার জীবনে এ কি ঘটতে চলেছে।
তিনি অনুভব করতে থাকলেন তাঁর মষ্তিষ্কে একটা ঘোর লাগা কাজ করছে। চিন্তা করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। এই খারাপ নারী তাঁর চিন্তাশক্তিকে গ্রাস করে ফেলেছে।
এটা একটি স্বপ্ন ভাবার প্রাণপণ চেষ্টা করতে থাকল। কিন্তু প্রচন্ড ঝড়ে পড়ে যদি কেউ চোখ বন্ধ করে তবে কি আদৌ ঝড় বন্ধ হয়ে যায়?
আরজ মোল্লার জীবনে কি কি পাপ করেছেন সেটা চিন্তা করতে করতে আচমকা টের পেলেন তার শিশ্নমুণ্ডে ঐ নারীর সম্মুখভাগের ধারাল দাঁত বসিয়ে দিয়েছে।
"মা-গো" "আল্লাহ গো" বলে চিৎকার দিয়ে উঠলেন আরজ মোল্লা। ততক্ষণে ফিনকি দিয়ে কয়েকটি ধারায় উষ্ণ রক্ত বের হওয়া শুরু করেছে। উত্তেজিত অবস্থায় তাঁর শিশ্নের আয়তন বেড়ে গিয়েছিল। দেহের রক্ত চলাচল ছিল দ্রুত। শিরায় শিরায় ছিল নতুন ও অনিন্দ্য সুন্দরী ফিরিংগী রুপসী কোন নারীর সাথে অভিসারের সংকল্প। আর সে কারণেই রক্তবিন্দুগুলো যেন খাঁচা থেকে ছাড়া পেয়ে উর্ধশ্বাসে দৌড়াচ্ছে ঐ বিশেষ মাংসপিন্ড থেকে।
রান্না করা মাংসের মতো করে তার শিশ্ন চর্বনের কিচকিচ করে খেতে লাগল ঐ নারী। এরপর পাশ থেকে একটা মাটির বড় দলা নিয়ে মোল্লার মাথার দিকে ছুঁড়ে দিয়ে দু পা ছড়িয়ে একটা টিবির ওপর বসে গেল শিশ্নখেকো ঐ রহস্যময়ী নারী।
⇲ ত্রিমাত্রিকার দুর্ঘটনা
২৫ মার্চ। ত্রিমাত্রিকার আজ জন্মদিন। পৃথিবীতে খুব কম মানুষই বোধহয় আছে যাদের কাছে নিজের জন্মদিনের মতো বিরক্তিকর ও অসহ্যকর দিন নেই। বছরের এই বিশেষ দিনে অন্যদের জন্য আনন্দ ও উৎসবের থাকলেও তিমা'র জন্য সেটা মোটেও সুখের নয়। কয়েকবার আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছে, যাতে পুনঃজন্ম নিয়ে আবার আসা যায়।
জন্মদিন হলেও তিমার জীবনে ২৫ মার্চ বিভীষীকাময়। তিমা'র জীবনে ঘটে যাওয়া ভয়ংকর ও নির্মমতর দিন এটা। আছাদৌল্লা উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় তাঁর জন্য সময় ছিল পাখির মতো ফুড়ুৎ করে উড়ে যাওয়া।
ওর কালো ডায়েরি'টা খুলে দেখে প্রতি জন্মদিনে।
ঐ দিন জন্মদিন উপভোগ করা হয়েছিল আনন্দের সাথে এবং সর্বোচ্চ জাঁকজমক করে। সবাই চলে গিয়েছিল প্রায় এমন সময় আচমকা কালবৈশাখী আঘাত হানে। বেশ বৃষ্টি হয় ঐ রাতে। তার বন্ধুদের নিজের বাড়িতে যাওয়ার সূযোগ ছিল না যে তা নয়। অনেকেরই ছিল। চারজন বন্ধু, সে আর লতা মিলে অপেক্ষা করছিল বৃষ্টি শেষ হবার জন্য।
রাত ১টা বেজে গেল অথচ গুড়িগুড়ি বৃষ্টি শেষ হয়নি। অগত্যা সবাই মিলে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিল। কোনমতে সবাই ঘুমিয়ে পড়ল।
ভয়াল রাতের ঘটনার তখনো শুরু হয়নি। রাত ৪টার দিকে তিমা টের পেল ডিভিডি প্লেয়ারে কিছু একটার শব্দ। অত্যন্ত অপরিচিত শব্দ। এদিকে বিদ্যুত চলে এসেছে।
তিমা তখন উঠে ড্রয়িংরুমে এসে দেখে তার বন্ধুরা না ঘুমিয়ে নগ্ন ভিডিও দেখছে। সে এই অদ্ভুত ব্যাপারটির সাথে পরিচিত নয়। ওরা চমকে গেলেও তিমা'কে ২ মিনিট দেখার জন্য অনুরোধ করল।
তিমা ১মিনিট দেখেই চলে গিয়েছিল। কিন্তু গিয়ে আর ঘুমোতে পারল না। পাশে ঘুমানো লতাকে ডেকে বলল আয় দেখ ওরা কি করছে।
নাহঃ আর পড়তে পারছে না। এর চেয়ে থ্রি এক্স দেখে এই রাতটি কাটানো অনেক ভাল। লতা আর তিমা দুজনেই আসামে এসে পড়াশুনা করেছে। আসাম থেকে মায়ং বেশি দুরে নয়। ওখান থেকে কালো জাদুতে পারদর্শীতা অর্জন করেছে লতা।
⇲ পোড়াবাড়িতে
সবুজ সুস্থ হওয়ার চারদিন পর থেকেই তারা ঐ বটগাছের নিচে শীতের ভারী কাপড় চোপড় পরে অ্যাডভেঞ্চারের উদ্দ্যেশ্যে যাচ্ছেন। কিন্তু ছয়দিন হয়ে গেল এখনো কোন অশরীরি/মানবী'র পাত্তা পাওয়া যায় নি।
সবুরে যে মেওয়া ফলে সে-কথা মিছে না। তাদের প্রত্যাশাকে ফেলনা না করে হঠাৎ একদিন ঐ রহস্যময়ী নারী আবির্ভূত হল। একা একা ঘুরছে। কোন ভয় ডর কিছুই নেই।
এত গভীর রাতে একা একা কি করে রাস্তার পাশে টিলাময় জায়গায় একটা নারী বিবস্ত্র হয়ে হাঁটতে পারে সেটা চিন্তা করে সবুজ প্রায় মুর্ছা গেল। কিন্তু ডঃ যোসেফ একদম স্বাভাবিক। তাকে চুপ থাকার ইংগিত করে বললেন, এখানেই বসে থাকো। আর এয়ারফোনের সাহায্যে আমার সাথে কথা বলবে।
সবুজ অপেক্ষা করতে থাকল। এর মধ্যে জ্বলজ্বলে চাঁদের নিচ দিয়ে তার চোখের সামনে কত যে মেঘমালা হেসে খেলে চলে গেল। অবশ্য সবুজ এগুলো গুনছে না। শুধু দেখছে। পাশের গোরস্তান থেকে উচ্চস্বরে একটা আওয়াজ তার অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে তুলল। "খু-উ---উ, খু-উৎ খু-উৎ"।
এছাড়া আর বিশেষ কোন শব্দ শোনা না গেলেও ভয়ে ভেতরটা সংকীর্ণ হয়ে গেছে সবুজের। মনে হচ্ছে আজই কোন দেও এসে তার মুন্ডুপাৎ করে নিবে। আকাশে এত সুন্দর চাঁদ অথচ পৃথিবীটা অশরীরি'র যন্ত্রণায় বেঁচে থাকাই দায়।
যাইহোক, অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরও যখন সাড়া পেল না, অগত্যা নিজের উদ্যোগেই ডঃ যোসেফকে খুঁজতে বের হল। এদিক ওদিক খুঁজে কোন পাত্তাই পাওয়া গেল না। না আছে ঐ নারী না আছে ডঃ যোসেফ।
সবুজের মনে আশংকা বাড়ছে। সে প্রতিজ্ঞা করে নিল, কোনক্রমে এ যাত্রায় বেঁচে গেলে ভুলেও আর আসবে না। বুকে বল রেখে সে গোরস্তানেও খুঁজল। এই বিদেশী লোকটা'র সাহস এত বেশি কেন, সেটা ভেবে মাথাও অনেকটা গরম হতে লাগল সবুজের।
বটগাছ পেরিয়ে একটা পরিত্যক্ত পোড়াবাড়ি আছে। এটাই কেবল বাকি আছে। এই নিশুতি রাতে এখানেও যেতে হবে ভেবে গাঁ ছরফর করে কাঁটা দিয়ে ওঠলো। না জানি নিজের জীবনটাই না খোয়াতে হয়।
ইতস্ত করতে করতে সবুজ শেষমেষ ঐ পোড়াবাড়িতেই ঢুকে পড়ল। নিজেকে সে একজন গোয়েন্দা ভাবছে। ডক্টরকে উদ্ধার করাই তার আপাতত মিশন।
বাড়িটা বিশাল। প্রাচীর অনেক জায়গায় ভাংগা থাকলেও অনেক ঘর আছে বেশ মজবুত। শ্যাওলা জমে বাড়ি'ট শ্রী নষ্ট হয়েছে বহু আগেই। প্যানিসিলিয়ামের রাজত্ব ইটের গায়ে গায়ে। মাঝে মধ্যেই ঝোপঝাঁড়।
হঠাৎ সামনে একটা জ্যাকেট দেখে আরেকবার গা কাঁটা দিয়ে ওঠল। এটা তো ডক্টরেরই। তাহলে কি ওকে গুম করে ফেলেছে?
নিজের প্রশ্নের উত্তর পেতে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি সবুজের।
আরো কিছুদুর এগুনোর পর একটা আঙিনা পেল সে। ওখানেই একটা উলংগ মানবদেহ পাওয়া গেছে। এটাই ডঃ যোসেফ। কিন্তু নির্জীব।
⇲ দুর্যোগ
গ্রামের সবাই ছিল নিরব। তাদেরকে দু-দলই ডেকেছিল। কিন্তু গ্রামের একটা মানুষও যায়নি। সরকারি দলের দুটি গ্রপ বটগাছ থাকার পক্ষে ও বিপক্ষে মারামারি করেছে। ৪জন নিহত, ৩ জন গুরুতর আহত, আর অনেকেই আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ।
পুলিশের এসআই দিলীপ ভট্টাচার্য তার প্লাটুন নিয়ে নিষ্ক্রিয় দর্শকের ভুমিকা পালন করেছেন বলে ক্ষোভ উঠেছে। এর সাথে দর্শক হিসেবে ছিল সাধারণ মানুষ।
বটগাছটি কাঁটা যায়নি। তবে খুনোখুনি হয়েছে। জাতীয় পত্রিকায় হেডলাইন হয়ে গেল এই ঘটনা। খবরে আরো বের হয়েছে, সুইজারল্যান্ডের নাগরিক ডঃ যোসেফ এই ঘটনার আগে দিন অসুস্থ অবস্থায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। এটা নিয়ে ব্যাপক গুজব ছড়িয়ে আছে। অনেকেই বলছেন, এই লোকটি দুই দলের মধ্যে মারামারি লাগিয়ে নিজে পগার পার হয়ে গেছে। মুসলামানদের মধ্যে মারামারি ঘটানোর জন্য সিআইএ/এফবিআই/মোসাদ তাকে বাংলাদেশে পাঠিয়েছিল।
অস্থিরতার রেশ কাটতে না কাটতে আরেকটি ঘটনা ঘটে গেল। ডঃ যোসেফের গাইড সবুজকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। তার নিজের বাড়িতেই।
শান্তির দেশে সংবাদপত্রের যে সংবাদশুন্যতা ছিল সেটা কেটে গেছে অচিরেই। একটি বটগাছকে কেন্দ্র করে কতশত ঘটনা দেশে যে, ঘটে গেল সেটা অকল্পনীয় ব্যাপার।
0 টি তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন