একেকজন সিইও এবং আমরা

আজকাল সোশ্যাল নেটওয়ার্কগুলাতে দেখতেছি বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানীর সি ই ও দের বক্তৃতা ও নানা রকম বানীর ছড়াছড়ি।
ওদের মহান বানী আমাদের পড়তে হচ্ছে কারন হলো যে যুগে আমরা জন্মেছি সে যুগে সাফল্যের মাপকাঠি হলো বিরাট কোন ধনী ব্যবসায়ী হওয়া অথবা বিরাট ব্যবসার সবচেয়ে বেশী বেতনের চাকুরীজীবি হওয়া, যার নাম সি ই ও।

ফলে এখন আপনাকে সারাদিন সুন্দর পিচাইয়ের বক্তৃতা পড়তে হচ্ছে । আপনারা কি জানেন, এটা করার পেছনে এই কোম্পানীগুলির পি আর ফার্মগুলিরও অবদান আছে?
সেটা নাহয় থাকলো । কিন্তু তারা যা বক্তৃতা দেন সেখানে তাদের নিজেদের বক্তব্য কি থাকে?
থাকে, তারা ছোটবেলায় কে কতটা সমস্যায় ছিলেন । আর থাকে কিছু বানী যার বেশীর ভাগই বিভিন্ন দার্শনিক, সমাজ বিজ্ঞানী, বৈজ্ঞানিকরা আগেই বলেছেন । তারা কেবল সেটাকে রিফ্রেজিং বা পুণঃবাক্যায়ণ করেন । আমরা আসলজনের নাম জানি না, তাই বক্তৃতার মধ্যে অ্যাডাপটেড লাইনস পড়ে খুব মুগ্ধ হয়ে যাই । কিন্তু আপনি অনেক অর্থ উপার্জন করেন অথবা আপনি অনেক দায়িত্ব পালন করে অনেক বেতন পান, এটা কি আপনাকে প্রকৃত অর্থেই সমাজকে জ্ঞানদানের যোগ্যতা দেয়?
সেটাও সমস্যা না ।
সমস্যা হলো আধুনিক যুগের এই প্রফেটরা মূলত প্রতিনিধিত্ব করেন পূঁজি নামক প্রভুর। যে পূঁজির প্রভুত্ব তারা মেনে নিয়ে তার দাসত্বে মন দিয়েছেন। তাদের বক্তৃতা বলতে থাকে কেন তাদের প্রতিষ্ঠান শ্রেষ্ঠ একটি প্রতিষ্ঠান, কিভাবে তাদের আইফোন বা ইউটিউব পৃথিবীর পরিবর্তন করে দিল। নীতি বা আদর্শিক উন্নয়ন নয়, একটি সেলফোন বা একটি গাড়ী, বা একটি সফটও্য়্যার নাকি দুনিয়া বদলায়।
ফলে জ্ঞানী ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ নয়, প্রযুক্তির বিপননকারী এখন অনুকরনীয় হয়ে উঠেছেন।
ব্লু টুথ যিনি আবিষ্কার করলেন তার চেয়ে এটা যিনি লক্ষ কোটি বার বেচতে পারলেন তিনিই আমাদের বেশী চেনা হয়ে দাড়ান।

একজন মানুষের সাফল্য মানুষের পাশে দাঁড়ানো, অসহায় জনের অসহায়ত্ব মোচন বা অধিকার আদায় এর সংগ্রাম, কিংবা নৈতিকতা ও মানবিকতার উন্নয়ন নয়, বরং তার কোম্পানীর ব্যালান্স শীটের উন্নয়ন, বেতনের বৃদ্ধির হার , বাজার দখল করায় এগিয়ে থাকা দিয়ে বিবেচিত হয় ।

যেহেতু তারা সেটা পারেন বা পেরেছেন, তাই্ তারাই প্রফেটিক ব্যক্তিত্ব হয়েছেন। অথচ পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে অসংখ্য মানুষ আছেন যারা তার সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। তাদের প্রায় কাউকেই আমরা চিনি না। তাদের মত হতেও চাই না। কারন তারা তো আর দিন শেষে বিলিয়ন ডলার অায় করে মিলিয়ন ডলার বেতন পান না।
যে কারনে দেখবেন এইসব সি ই ও দের নিয়ে সংবাদে বলা হবেই যে তার বেতন কত লাথ ডলার। কারন এই লক্ষ ডলার বেতন হলো তার সাফল্যের মাপকাঠি।
অথচ এমন বেতনে ৫ বছর কাজ করার পরে কিন্তু আর জীবনে কাজ না করলেও হয়। শুনেছেন কখনো কোন সি ই ও সাহেব তার জীবনের সব কিছু দান করেছেন? ব্যবসায়িরা করেন। সিইওরা পারেন না। বলেন তো দেখি গত দশ বছরে বড় বড় বিশজন সিইও ছিলেন যারা, তারা এখন কোথায় কি করছেন?
তারা হয় আরো বড় কোন প্রতিষ্ঠানে আরো অায় করছেন অথবা রাজনীতি করে আরো ক্ষমতার দিকে যাচ্ছেন।
টাকা যখন একটি সমাজে সাফল্যের একমাত্র মাপকাঠি হয়, তখন লোভ সেই সমাজের প্রভু হয়, দেবতা হয়, পূজনীয় হয়।
সেই সমাজে অস্থিরতা, হিংসা, হানাহানি বাড়বেই।
তাই বেশী উপার্জনের আগে জনগণকে নৈতিকভাবে উন্নত করা দরকার। যাতে লোভীদের জীবন নয়, মানবিক জীবনের জন্য আমরা টাকাকে কাজে লাগাতে পারি ।
যাতে বেতনদারীতে নয়, সৃষ্টিশীলতায় শ্রেষ্ঠ মানুষেরা আমাদের কাছে বেশী শ্রুত ও গ্রহনীয় হয়। জানি সে সমাজ গড়া কঠিন, কিন্তু সেই সমাজ গড়ার চেষ্টাই হলো মানবিকতার পথে যাত্রা ।

(Abdun Noor Tushar অবলম্বনে)
Share on Google Plus

গেম চেঞ্জার

বাংলাদেশ কে নিয়ে খালি স্বপ্ন দেখি না টুকটাক কাজও করি । মূলত যান্ত্রিকতায় আবদ্ধ এক সত্ত্বা। ছড়া, কাব্য, গল্পে, ছবি, ভ্রমণে, বিশ্লেষণেও নিজেকে খুঁজে ফিরি।
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 টি তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন