পর্ব ১ যদি না পড়ে থাকেন
ঘন্টাখানেক আগে একটা ঝড়ের মধ্য দিয়ে বাসায় এসেছে সেটা ভুলে গেছে রুজি। খাওয়া দাওয়া শেষ করে পড়ার টেবিলে বসে নিত্যদিনের রুটিন মোতাবেক এসার নোটবুকে গভীরভাবে ফেসবুক ঘাটছিল।
হটাৎ আঁতকে ওঠল রুজেলের একটা ফ্রেন্ডের ট্যাগ থেকে। তাদের ক্লাসের ফার্স্টবয় রুজেলকে সে ফলো করে ফেক একটা ছেলে আইডি থেকে।
একটা ছবি আর নিচে ইউটিউব ভিডিও লিংক। ভর দুপুরের ন্যায় রোদেলা শরতের বিকেলেও রুজির দু চোখে আঁধারের ছায়া নেমে আসলো। অল্প নোয়ানো মাথাটা একটু তুলে জানালায় চেয়ে দেখে অফিসের ভু-গোলকের ন্যায় আজ সত্যি সত্যি পৃথিবীটা তাঁকে ঘিরে চারদিকে ঘুরছে খুব ধীরে ধীরে। ঠাসকি খেলে কেউ যেভাবে মুখটা টানটান করে চোখ বড় করে ফেলে অনেকটা সেইভাবেই রুজি অখেয়ালে ভয় পাওয়া গলায় উচ্চারন করল একেবারেই অখেয়ালে। একি? কে ভিডিও করল?
রুজি আজই মোটামুটি একঘন্টা আগে শাহেববাজার স্কুলের রাস্তার মোড়ে একটা ছেলের মুখে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে মনের ঝাল মিটিয়ে এসেছে। ছেলেটাকে এলাকার লোকেরা এতক্ষনে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। ফেসবুকে একজন সাংবাদিক লিখেছেন জিহবার একটা কোনা কেটে গেছে। মুখের কয়েক জায়গায় জখম হয়েছে। পুলিশ হাসপাতালে গেছে একটু আগে।
রুজির ভাল করেই চোখে ভাসছে ঐ বখাটের মুখে ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটানোর ব্যাপারটা। শয়তানটাকে ভালভাবেই না কুপিয়েও শান্ত হয়েছিল এইতো ঘন্টাখানেক আগে। রুজির মনোরাজ্যে অনেক কিছুই উথাল পাতাল হতে থাকে দ্রুত এবং দ্রুত।
কিন্তু ভিডিওটা কে করল ছবিই বা কে তুলল কিছুই তো দেখলাম না।
হায়! আল্লাহ! সব তো দেখি ফেসবুকে চলে এসেছে। মজা লস পেজে, কেউ আমারে মাইরালা সহ বড় বড় সব পেজেই আপলোড হয়েছে। আরো হচ্ছে। মিনিটে মিনিটে কপি আপলোড হচ্ছে। সারা দেশের ছেলেরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। নারী বিদ্বেষীরা বলা শুরু করেছে এটা নারীবাদি আন্দোলনের ফসল। পুরো নারী জাতির উপর কলংক আরোপের চেস্টা করছে অনেকেই। উহঃ সব আমার কারনে।
নিশ্চয়ই একটু পরে বড় বড় ফেসবুক সেলিব্রেটিরাও কমেন্ট করা শুরু করবে। আমার নির্যাতিত হবার ব্যাপারটা কেউই ভেবে দেখছে না। সবাই সিমপেথি করছে ঐ ছেলেটার জন্য। এমনকি অনেক মেয়েরাও সমালোচনা করছে। ছেলেটার কোনও দোষ থাকতে পারে এটা ভেবে দেখছে না কেউই। একমুখি। সবাই একমুখী স্রোতে ভেসে যাচ্ছে।
আশ্চর্য!! কারো মাথায়ই আসছে না যে এই ছেলেটার কোন ক্রিয়া থাকতে পারে। এই ছেলেটা যে আমাকে ইভটিজিং করল সেটা কি কেউই চিন্তা করবে না?
রুজির অনভিজ্ঞ মষ্তিষ্ক কোন কুলকিনারা করতে পারবে এটা ভাবাই যে অসম্ভব। অতএব যেই উপায় বের করবার কথা সেটাই বের করল মেয়েটা। উপায়টা কার্যকরী করতে দরকার বিষের একটা কৌটা। বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ এনেছে গত শুক্রবারই রুজির বাবা। আর এখন সেটাই খুঁজতে কিচেনের দিকে পা বাড়াল।
কিচেনে পৌছানোর আগেই সে বাইরে একটা চাপা শোরগোল শুনল। দ্রুতলয়ে বাড়ছে এই কোলাহল। তাই বিষের খোঁজ করাটা আপাতত বাদ দিয়ে সে থাই জানালার পর্দা দিয়ে তাকালো।
জানালায় না তাকিয়ে বিষের কৌটা থেকে সবগুলো বিষ মুখে পুরে নেয়াটাই বোধহয় মেয়েটার জন্য অপেক্ষাকৃত ভাল ছিল। রুজির মাথায় মেঘবিহীন বজ্রপাতই আঘাত করেছে কি না সেটা বলা শক্ত তবে সে টের পেল পায়ের নিচটা কেমন যেন ঘেমে যাচ্ছে। হাতের তালুও ঘামছে। পায়ের হাটু দুটো কাঁপছে। বুকের ভেতর হৃৎপিন্ডে হাতুড়ির আঘাতের মতো শব্দ শুনা যাচ্ছে। মেরুদন্ডের কশেরুকাগুলি থেকে অদ্ভুত শিহরণ সারা দেহকেই কাঁপিয়ে তুলছে।
ক্লাস নাইনে পড়া এই মেয়েটা কি করে কল্পনা করবে এত তাড়াতাড়ি তাদের বাসায় পুলিশ চলে আসব. দেশের আইন আদালতের স্টেপ নেয়াটা প্রভাবহীনদের জন্যই খুব দ্রুত কাজ করতে পারে । যেটা প্রভাবশালী কেউ হলে দু এক দিনেও পুলিশের কাছে পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারটা হতো স্বাভাবিক গতি সেখানে ১ ঘন্টার ভেতরে বাসায় পুলিশ এসে হাজির। ১৫-২০ জন। কয়েকজন মহিলা পুলিশও।
কোন সন্দেহ নেই রুজিকেই নিতে পুলিশ এসেছে। বাইরে দাঁড়িয়ে এক পুলিশ অফিসার ধমকী সুরেই বলল বাসায় কে আছে?
রুজিকে ভয় পেলে চলবে না। সে খুবই নম্র সুরে জানাল বাবা বাসায় নেই। মাও পাশের বাসায় কি একটা কাজে গেছেন এখনি চলে আসবেন। এও জানাল একমাত্র ছোটভাই যার বয়স দু-তিন হবে সে ছাড়া আর কেউ নেই।
পুলিশ অফিসার একটা গালি দিয়ে নাম জিজ্ঞেস করলেন যেটা রুজির মষ্তিষ্কের কর্টেক্সে নিদারুনভাবেই আঘাত করল। তবে পুলিশরা যে খারাপ হয় সেটা নেটের সুবাদে অনেক আগেই জেনে হয়ে গিয়েছে অতএব একটা ঢোক গিলে সামলে নিল। তাঁর মনে হল খুব শান্ত মাথায় এই পরিবেশ মোকাবেলা করতে হবে। কোনরকম উত্তেজিত হওয়া চলবে না।
এই রকমের একটা খারাপ সময়ে রাজিন (যে রুজির মামাতো ভাই) কোত্থেকে এসে উদয় হবে কে জানে। ওর হাতে গ্রাম থেকে নিয়ে আসা নারকেল, পিঠার ব্যাগ এই সেই। রুজি লজ্জায় হার্টফেল করবে এমন অবস্থায় ওকে চমকে দিয়ে এক কনস্টেবল ওকেই বামহাতে হাতকড়া পড়িয়ে বসল।
ততক্ষণে রুজির মা এসে পড়ছেন। পুলিশ অফিসার উনাকে দেখেই চেঁচিয়ে ওঠল। আপনি মেয়ে পুষছেন নাকি সন্ত্রাসী মেয়ে তৈরি করছেন।
রুজির মা কখনো পুলিশের সাথে চলাফেরা করেন নি। তাদের সাথে ওটাবসা সে তো অনেক দুরের ব্যাপার। তিনিও অনভিজ্ঞ। তবে সাহস করে ভদ্রভাবেই জবাবটা দেবার চেস্টা করলেন।
আমার মেয়ে একটা ট্যালেন্ট মেয়ে। স্কুলে সে বিভিন্ন ইভেন্টেই এনাম এনেছে। আসুন দেখে যান সনদ আর ক্রেস্ট।
কথাটা শেষ করার আগেই এক মহিলা পুলিশ অফিসার ভদ্রমহিলার বাম গালে এত জোরে একটা চড় কষিয়ে দিলেন যে তিনি অজ্ঞান হয়ে গেলেন। রুজি পানি আনতে ভেতরে যেতে চাচ্ছিল কিন্তু এত ভয় পেয়েছে যে তাঁর পেটে পর্যন্ত গন্ডগোল শুরু হল। অবশ্য পুলিশ অফিসার এক কনস্টেবলকে পাঠালেন ভেতরে পানি আনতে।
রুজির মাকে পাগলের মত স্থবির অবস্থায় রেখেই পুলিশ ভ্যানে রাজিন ও রুজিকে তোলা হল। তবে তার আগে বাসা তল্লাশি করে কয়েকটা সিডি ও ইসলামিক বই উদ্ধার করা হলো যা এই মুহুর্তে রুজির পায়ের নিকট পড়ে আছে। জাকির নায়েকের ডাবিংয়ের সিডিটা বিক্ষিপ্তভাবে রাখা আছে এখন সেদিকে আড়চোখে দেখে নিল রুজি। আর পাশেই ছুড়ে রাখা আছে মোকসেদুল মোমেনীন সমগ্র। রবিন্দ্রনাথের শেষের কবিতা, শরৎচন্দ্রের রচনাসমগ্র, জীবনান্দের কবিতা সমগ্র।
রুজির মামাতো ভাইয়ের অবস্থাটা খুবই সংকটাপন্ন। এখনো লোকটার মুখে ঘামের ফোঁটাগুলি স্পষ্ট বলছে তিনি ভয় পেয়ে গেছেন। এই লোকটা অনার্সে পড়ে কে বলবে। এখন পর্যন্ত কোন কথা বলেনি। পুলিশের কেউই ওকে নামটা পর্যন্ত জিজ্ঞেস করেনি। রুজি ভাবল রাজিন ভাইয়ার হয়ত অভিজ্ঞতা আছে।
ধীরে ধীরে রুজি আবিস্কার করলো সে মোটেই ভয় পাচ্ছে না। সে মাথা তুলে তাকাল। সামনে পুলিশ ইন্সপেক্টর বসা। সে সাহসের কথা চিন্তা না করেই প্রশ্ন করে বসলো
- মামা। আমাদের অপরাধ কি?
পুলিশ অফিসারটি কেমন যেন হকচকিয়ে গেল। খুব সম্ভবত কোন রকমের প্রশ্ন আশা করেনি লোকটা। রুজির দিকে ভয়ানক চোখে তাকিয়ে খালি হাত তুলে চড় মারার সাংঘাতিক রকমের ইশারা করল।
রুজির সাহস অনেকটাই দমে গেল। সে বুঝে নিল এইসব মানুষের চেহারার পশুদের কাছ থেকে কোন ভাল ব্যবহার আশা করাই বৃথা। এদের কোন মন বলতে কিছু নেই সেটা নিয়ে আর কোনই সন্দেহ রইল না বাস্তব দুনিয়া না দেখা এই মেয়েটার।
পাদটিকাঃ পুলিশ সম্পর্কে খারাপ ধারণা করার দরকার নেই। খারাপ ধারনা পোষণ করতে হলে এই পোস্টটা একটু ঘুরে আসেন। গ্রিন সিগনাল
http://www.somewhereinblog.net/blog/gameChanger/30075318
ঘন্টাখানেক আগে একটা ঝড়ের মধ্য দিয়ে বাসায় এসেছে সেটা ভুলে গেছে রুজি। খাওয়া দাওয়া শেষ করে পড়ার টেবিলে বসে নিত্যদিনের রুটিন মোতাবেক এসার নোটবুকে গভীরভাবে ফেসবুক ঘাটছিল।
হটাৎ আঁতকে ওঠল রুজেলের একটা ফ্রেন্ডের ট্যাগ থেকে। তাদের ক্লাসের ফার্স্টবয় রুজেলকে সে ফলো করে ফেক একটা ছেলে আইডি থেকে।
একটা ছবি আর নিচে ইউটিউব ভিডিও লিংক। ভর দুপুরের ন্যায় রোদেলা শরতের বিকেলেও রুজির দু চোখে আঁধারের ছায়া নেমে আসলো। অল্প নোয়ানো মাথাটা একটু তুলে জানালায় চেয়ে দেখে অফিসের ভু-গোলকের ন্যায় আজ সত্যি সত্যি পৃথিবীটা তাঁকে ঘিরে চারদিকে ঘুরছে খুব ধীরে ধীরে। ঠাসকি খেলে কেউ যেভাবে মুখটা টানটান করে চোখ বড় করে ফেলে অনেকটা সেইভাবেই রুজি অখেয়ালে ভয় পাওয়া গলায় উচ্চারন করল একেবারেই অখেয়ালে। একি? কে ভিডিও করল?
রুজি আজই মোটামুটি একঘন্টা আগে শাহেববাজার স্কুলের রাস্তার মোড়ে একটা ছেলের মুখে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে মনের ঝাল মিটিয়ে এসেছে। ছেলেটাকে এলাকার লোকেরা এতক্ষনে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। ফেসবুকে একজন সাংবাদিক লিখেছেন জিহবার একটা কোনা কেটে গেছে। মুখের কয়েক জায়গায় জখম হয়েছে। পুলিশ হাসপাতালে গেছে একটু আগে।
রুজির ভাল করেই চোখে ভাসছে ঐ বখাটের মুখে ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটানোর ব্যাপারটা। শয়তানটাকে ভালভাবেই না কুপিয়েও শান্ত হয়েছিল এইতো ঘন্টাখানেক আগে। রুজির মনোরাজ্যে অনেক কিছুই উথাল পাতাল হতে থাকে দ্রুত এবং দ্রুত।
কিন্তু ভিডিওটা কে করল ছবিই বা কে তুলল কিছুই তো দেখলাম না।
হায়! আল্লাহ! সব তো দেখি ফেসবুকে চলে এসেছে। মজা লস পেজে, কেউ আমারে মাইরালা সহ বড় বড় সব পেজেই আপলোড হয়েছে। আরো হচ্ছে। মিনিটে মিনিটে কপি আপলোড হচ্ছে। সারা দেশের ছেলেরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। নারী বিদ্বেষীরা বলা শুরু করেছে এটা নারীবাদি আন্দোলনের ফসল। পুরো নারী জাতির উপর কলংক আরোপের চেস্টা করছে অনেকেই। উহঃ সব আমার কারনে।
নিশ্চয়ই একটু পরে বড় বড় ফেসবুক সেলিব্রেটিরাও কমেন্ট করা শুরু করবে। আমার নির্যাতিত হবার ব্যাপারটা কেউই ভেবে দেখছে না। সবাই সিমপেথি করছে ঐ ছেলেটার জন্য। এমনকি অনেক মেয়েরাও সমালোচনা করছে। ছেলেটার কোনও দোষ থাকতে পারে এটা ভেবে দেখছে না কেউই। একমুখি। সবাই একমুখী স্রোতে ভেসে যাচ্ছে।
আশ্চর্য!! কারো মাথায়ই আসছে না যে এই ছেলেটার কোন ক্রিয়া থাকতে পারে। এই ছেলেটা যে আমাকে ইভটিজিং করল সেটা কি কেউই চিন্তা করবে না?
রুজির অনভিজ্ঞ মষ্তিষ্ক কোন কুলকিনারা করতে পারবে এটা ভাবাই যে অসম্ভব। অতএব যেই উপায় বের করবার কথা সেটাই বের করল মেয়েটা। উপায়টা কার্যকরী করতে দরকার বিষের একটা কৌটা। বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ এনেছে গত শুক্রবারই রুজির বাবা। আর এখন সেটাই খুঁজতে কিচেনের দিকে পা বাড়াল।
কিচেনে পৌছানোর আগেই সে বাইরে একটা চাপা শোরগোল শুনল। দ্রুতলয়ে বাড়ছে এই কোলাহল। তাই বিষের খোঁজ করাটা আপাতত বাদ দিয়ে সে থাই জানালার পর্দা দিয়ে তাকালো।
জানালায় না তাকিয়ে বিষের কৌটা থেকে সবগুলো বিষ মুখে পুরে নেয়াটাই বোধহয় মেয়েটার জন্য অপেক্ষাকৃত ভাল ছিল। রুজির মাথায় মেঘবিহীন বজ্রপাতই আঘাত করেছে কি না সেটা বলা শক্ত তবে সে টের পেল পায়ের নিচটা কেমন যেন ঘেমে যাচ্ছে। হাতের তালুও ঘামছে। পায়ের হাটু দুটো কাঁপছে। বুকের ভেতর হৃৎপিন্ডে হাতুড়ির আঘাতের মতো শব্দ শুনা যাচ্ছে। মেরুদন্ডের কশেরুকাগুলি থেকে অদ্ভুত শিহরণ সারা দেহকেই কাঁপিয়ে তুলছে।
ক্লাস নাইনে পড়া এই মেয়েটা কি করে কল্পনা করবে এত তাড়াতাড়ি তাদের বাসায় পুলিশ চলে আসব. দেশের আইন আদালতের স্টেপ নেয়াটা প্রভাবহীনদের জন্যই খুব দ্রুত কাজ করতে পারে । যেটা প্রভাবশালী কেউ হলে দু এক দিনেও পুলিশের কাছে পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারটা হতো স্বাভাবিক গতি সেখানে ১ ঘন্টার ভেতরে বাসায় পুলিশ এসে হাজির। ১৫-২০ জন। কয়েকজন মহিলা পুলিশও।
কোন সন্দেহ নেই রুজিকেই নিতে পুলিশ এসেছে। বাইরে দাঁড়িয়ে এক পুলিশ অফিসার ধমকী সুরেই বলল বাসায় কে আছে?
রুজিকে ভয় পেলে চলবে না। সে খুবই নম্র সুরে জানাল বাবা বাসায় নেই। মাও পাশের বাসায় কি একটা কাজে গেছেন এখনি চলে আসবেন। এও জানাল একমাত্র ছোটভাই যার বয়স দু-তিন হবে সে ছাড়া আর কেউ নেই।
পুলিশ অফিসার একটা গালি দিয়ে নাম জিজ্ঞেস করলেন যেটা রুজির মষ্তিষ্কের কর্টেক্সে নিদারুনভাবেই আঘাত করল। তবে পুলিশরা যে খারাপ হয় সেটা নেটের সুবাদে অনেক আগেই জেনে হয়ে গিয়েছে অতএব একটা ঢোক গিলে সামলে নিল। তাঁর মনে হল খুব শান্ত মাথায় এই পরিবেশ মোকাবেলা করতে হবে। কোনরকম উত্তেজিত হওয়া চলবে না।
এই রকমের একটা খারাপ সময়ে রাজিন (যে রুজির মামাতো ভাই) কোত্থেকে এসে উদয় হবে কে জানে। ওর হাতে গ্রাম থেকে নিয়ে আসা নারকেল, পিঠার ব্যাগ এই সেই। রুজি লজ্জায় হার্টফেল করবে এমন অবস্থায় ওকে চমকে দিয়ে এক কনস্টেবল ওকেই বামহাতে হাতকড়া পড়িয়ে বসল।
ততক্ষণে রুজির মা এসে পড়ছেন। পুলিশ অফিসার উনাকে দেখেই চেঁচিয়ে ওঠল। আপনি মেয়ে পুষছেন নাকি সন্ত্রাসী মেয়ে তৈরি করছেন।
রুজির মা কখনো পুলিশের সাথে চলাফেরা করেন নি। তাদের সাথে ওটাবসা সে তো অনেক দুরের ব্যাপার। তিনিও অনভিজ্ঞ। তবে সাহস করে ভদ্রভাবেই জবাবটা দেবার চেস্টা করলেন।
আমার মেয়ে একটা ট্যালেন্ট মেয়ে। স্কুলে সে বিভিন্ন ইভেন্টেই এনাম এনেছে। আসুন দেখে যান সনদ আর ক্রেস্ট।
কথাটা শেষ করার আগেই এক মহিলা পুলিশ অফিসার ভদ্রমহিলার বাম গালে এত জোরে একটা চড় কষিয়ে দিলেন যে তিনি অজ্ঞান হয়ে গেলেন। রুজি পানি আনতে ভেতরে যেতে চাচ্ছিল কিন্তু এত ভয় পেয়েছে যে তাঁর পেটে পর্যন্ত গন্ডগোল শুরু হল। অবশ্য পুলিশ অফিসার এক কনস্টেবলকে পাঠালেন ভেতরে পানি আনতে।
রুজির মাকে পাগলের মত স্থবির অবস্থায় রেখেই পুলিশ ভ্যানে রাজিন ও রুজিকে তোলা হল। তবে তার আগে বাসা তল্লাশি করে কয়েকটা সিডি ও ইসলামিক বই উদ্ধার করা হলো যা এই মুহুর্তে রুজির পায়ের নিকট পড়ে আছে। জাকির নায়েকের ডাবিংয়ের সিডিটা বিক্ষিপ্তভাবে রাখা আছে এখন সেদিকে আড়চোখে দেখে নিল রুজি। আর পাশেই ছুড়ে রাখা আছে মোকসেদুল মোমেনীন সমগ্র। রবিন্দ্রনাথের শেষের কবিতা, শরৎচন্দ্রের রচনাসমগ্র, জীবনান্দের কবিতা সমগ্র।
রুজির মামাতো ভাইয়ের অবস্থাটা খুবই সংকটাপন্ন। এখনো লোকটার মুখে ঘামের ফোঁটাগুলি স্পষ্ট বলছে তিনি ভয় পেয়ে গেছেন। এই লোকটা অনার্সে পড়ে কে বলবে। এখন পর্যন্ত কোন কথা বলেনি। পুলিশের কেউই ওকে নামটা পর্যন্ত জিজ্ঞেস করেনি। রুজি ভাবল রাজিন ভাইয়ার হয়ত অভিজ্ঞতা আছে।
ধীরে ধীরে রুজি আবিস্কার করলো সে মোটেই ভয় পাচ্ছে না। সে মাথা তুলে তাকাল। সামনে পুলিশ ইন্সপেক্টর বসা। সে সাহসের কথা চিন্তা না করেই প্রশ্ন করে বসলো
- মামা। আমাদের অপরাধ কি?
পুলিশ অফিসারটি কেমন যেন হকচকিয়ে গেল। খুব সম্ভবত কোন রকমের প্রশ্ন আশা করেনি লোকটা। রুজির দিকে ভয়ানক চোখে তাকিয়ে খালি হাত তুলে চড় মারার সাংঘাতিক রকমের ইশারা করল।
রুজির সাহস অনেকটাই দমে গেল। সে বুঝে নিল এইসব মানুষের চেহারার পশুদের কাছ থেকে কোন ভাল ব্যবহার আশা করাই বৃথা। এদের কোন মন বলতে কিছু নেই সেটা নিয়ে আর কোনই সন্দেহ রইল না বাস্তব দুনিয়া না দেখা এই মেয়েটার।
পাদটিকাঃ পুলিশ সম্পর্কে খারাপ ধারণা করার দরকার নেই। খারাপ ধারনা পোষণ করতে হলে এই পোস্টটা একটু ঘুরে আসেন। গ্রিন সিগনাল
http://www.somewhereinblog.net/blog/gameChanger/30075318
0 টি তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন