যুগান্তকারী শিক্ষানীতি নিচ্ছে সরকার ?




১।(ফ্যাক্ট)

সরকারের এক মন্ত্রী (নাম বলতে নিষেধ করেছেন) মন্ত্রীপরিষদে মত প্রকাশ করেছেন -

"দেশে ছাত্রদের আন্দোলন আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে । সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার স্বার্থে একটি সফল নির্বাচনে আমাদের যে দ্বায়িত্ব বর্তেছে তার প্রতি আমরা সুবিচার করতে পারছি না ।

আমরা বরাবরই তথ্য প্রযুক্তি নিয়ে গুরুত্ব দেই । বাজেটের দিকে দেখলেই এটা বোঝা যায় । কিন্তু আমি বলব সরকারের উচিত সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া শিক্ষা খাতকে । সমস্যার কথা হল এর বিপরীতে শিক্ষকদের বেতন কমিয়ে আমরা দেশের শিক্ষার প্রগতিকে নষ্ট করে দিয়েছি । শিক্ষাখাত একটি গৌন খাত বলে ইতিমধ্যে প্রতিয়মান হয়েছে ।

এখন যেটা হচ্ছে সেটা আসলেই মাত্রা অতিক্রম করে ফেলেছে । শিক্ষা কোন পণ্য নয় অথচ আমরা এর অপর ভ্যাট আরোপ করছি যেটা চিন্তাও করা যায় না । আমাদের ব্যর্থতা যেখানে এই বাচ্চাদের যথেষ্ট সংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয় তৈরী করে শিক্ষার সূযোগ সৃষ্টি করা সেখানে .. !!"





২। (অ্যাক্ট )

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিবের দেয়া তথ্যমতে সরকার শিক্ষাখাতের ব্যপারে নড়েচড়ে বসেছে । শিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রী পরিকল্পনা করেছেন দেশের সবকটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় সরকারের নখদর্পনে থাকবে । তাদের আয় ব্যয় সরকারের অর্থ বিভাগ কর্তৃক পরিচালিত হবে । পড়াশুনার সিলেবাস একই থাকবে এবং বিদেশের বিশেষত যুক্তরাজ্যকে অনুসরণ করে সম্পুর্ণ আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সিলেবাস প্রচলন করা হবে । উন্নত দেশের ন্যায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলন করা হবে ।

দেশের যে কটি বিশ্ববিদ্যালয় তা মোটেও ২০ লাখ শিক্ষার্থীদের জন্য যথেষ্ট নয় । প্রতি ২০ হাজার জনের জন্য অন্তত ১টি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে জমি অধিগ্রহণ করে কাজ শুরু করতে হবে । কমপক্ষে ১৫০টি বিশ্ববিদ্যালয় দেশে থাকবে । থাকা খাওয়া ফ্রি । প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে যথেষ্ট সংখ্যক আবাসনিক ব্যবস্থা থাকবে ।
যেহেতু ফ্রি তথা মাগনা জিনিসের দাম আমরা দিতে ভুলে যাই সে কারনে প্রত্যেকের জন্য ফি নির্ধারিত থাকবে মাসে ১৫০০ টাকা । যারা দিতে পারবে না তাদের পড়াশোনার পরিশ্রম/মেধার রেজাল্ট দেখে মাফ করা হবে ।

ভার্সিটিগুলোতে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন অন্তত ১০০ জন শিক্ষক থাকবেন । তাদের যথেষ্ট বেতন নিশ্চিত করা হবে । মধ্যম গতির ইন্টারনেট ফ্রি থাকবে । তবে ল্যাব ছাড়া ২ এমবিপিএস এর বেশি গতি ছাত্রদের জন্য নিষিদ্ধ ।

ছাত্রদের পড়াশুনার বাইরে কাজ করা নিষেধ । তবে যারা আত্মনির্ভরশীল হতে চায়, আর্থিকভাবে দুর্বল কেবল তারাই দরখাস্ত করে শিক্ষা, সংষ্কৃতি, কর্পোরেট (পার্ট টাইম) ও ইন্টারনেট বেজ ব্যবসা করতে পারবে । এবং এসব ব্যবসা শুরু করার জন্য তাদের জন্য স্পেশাল ঋণের প্রচলন করা হবে যেটা ঐ বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কোন ব্যাংক দেবে । তবে কোনভাবেই পুরোদমে ব্যবসায় জড়িত হওয়া যাবে না । এটা মনিটরিং করার জন্য আলাদা আলাদা টিম থাকবে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ।

যে সব ছাত্র প্রতিভাবান বলে নিজেদের প্রমাণ করতে পারবে তাদের জন্য বিশেষ পুরষ্কার থাকবে প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে । এছাড়া যারা শিক্ষা, সংষ্কৃতি ও ইন্টারনেট ভিত্তিক ব্যবসা করে মডেল সফলতা পাবে তাদের জন্যও সম্মাননা থাকবে ।

ছাত্ররা নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের অধিকার নিয়ে রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালাতে পারবে । তবে প্রশাসন যদি দেখে শিক্ষা অসংশ্লিষ্ট কোন ব্যপার চলছে তাহলে তার ছাত্রত্ব সাময়িক বাতিল করতে পারে ।

জাতীয়ভাবে কোন ছাত্র রাজনীতি চলবে না । দেশের সব ইস্যু নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের কথা না বললেও চলবে । যদি মিছিল মিটিং করতে হয় তা করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে করতে হবে । তবে ইন্টারনেটে তারা সচেতনভাবে সারা দেশে র‌্যালি বা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে পারবে ।
শিক্ষা বিষয়ক বিশেষ স্থায়ী আদালত থাকবে । যেখানে ছাত্রত্ব বাতিল, পদত্যাগ সংক্রান্ত চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়া হবে ।






৩। (রি-অ্যাক্ট)

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই পরিক্পনার চরম বিরোধিতা করছেন । তবে প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন । প্রধানমন্ত্রী তাদের বিবিধ মত নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন । সেদিনকার মত তিনি কোন সিদ্ধান্ত দিলেন না ।

গোপনীয়ভাবে এ সভা দেশের কাউকেই জানানো হয়নি । মন্ত্রীরা কোনকিছু জানালেন না । সাংবাদিকরা যারা গিয়েছিলেন তাই তারা বিশেষ কিছুই জানেন না । শিক্ষা নিয়ে সরকার কিছু করতে চাচ্ছে নাকি বিরোধী দল নিয়ে কোন প্লান নাকি অন্য কিছু কেউই ঠাওরে নিতে পারলেন না ।







৩। (ই-ফ্যাক্ট)

শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত শিক্ষার পক্ষেই গৃহীত হলো । ৪ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা । ২,০০০ বিলিয়ন টাকার পরিকল্পনা । ১ম বছর ১০০০ বিলিয়ন । বাকি ১,০০০ বিলিয়ন পরের ৩ বছর খরচ করা হবে । কিন্তু সরকারের দরকার ২০১৯ সালের মধ্যে ভাল ফলাফল ।

- ২০১৬ সালের মধ্যে আবাসিক এলাকা ভাড়া করে ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়/উচ্চ শিক্ষা ও নতুন ২ হাজার মাধ্যমিক ও ৩ হাজার প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে ।
- ২০১৭ সালের মধ্যে এইসব প্রতিষ্টানের নির্মানকাজ শেষ করে ২০১৮ সালের মধ্যে পুরোদমে চালু করা হবে ।
- ২০১৬ সালের আগেই সারা দেশে ২৫৬ কেবিপিএস ইন্টারনেট ফ্রি করে দেওয়া হবে কেবল ছাত্রদের জন্য । এই ব্যন্ডউইথ সরকার নিজে থেকেই দেবে ।
- সারা দেশে ১ এমবিপিএসের সর্বোচ্চ মুল্য নির্ধারণ করা হবে ৮০০ টাকা । মোবাইল কোম্পানিসমুহ ১ গিগাবাইট ডাটা সর্বোচ্চ ৬০ টাকায় বিক্রি করতে পারবে ।
- টেকনোলজি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় অন্তত ১৮ টি থাকবে ।
- সংষ্কৃতি, কলা, বিজ্ঞান, মাদ্রাসা বিষয়ক আলাদা আলাদা প্রতিষ্টান করা হবে ।
- মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীদের জন্যও সমান সিলেবাস ও শিক্ষা কাঠামো থাকবে । এজন্য বিশেষ টাস্কফোর্স থাকবে ।
- খেলাধুলা বিশেষত ফুটবল ও ক্রিকেটের জন্য আলাদা আলাদা ক্রীড়া শিক্ষার জন্য ব্যবস্থা করা হবে ।
- মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করা হবে ৬ টি । কলেজ ৫০ টি ।







৪। (রি-ফ্যাক্ট)

মাঝখানে কতিপয় মন্ত্রী হলের বাইরে এসে ঘোৎ ঘাৎ করলেন । মাদ্রাসার আন্দোলন চললেও তা সফল হয়নি । ব্যবসায়ীরা অনশন করলেও লাভ কিছুই হয়নি । পরে দেশব্যপী প্রতিবাদমূলক বিক্রি বর্জন করলেও প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় অবস্থানে সব আন্দোলন বিফল হয় । সরকারের নীতির একচুলও এদিক সেদিক করা যায়নি ।

সমস্যা সবচেয়ে বেশী হলো সিভিল প্রশাসন ও সরকারের কর্মচারীদের বেতন নিয়ে । সরকার বিশেষভাবে কৌশলে তাদের সামলাতে চেষ্টা করলো । গোপন ক্যামেরা পদ্ধতিতে অনেক দুর্নিতিবাজ কর্মচারীদের ধরা হলো । ফলে রাজস্ব ও বিবিধ খাতে দুর্নিতি কমে গেল ।
সরকার হিমশিম খেল বেতন ও বেশ কয়েকখাতে । যোগাযোগ ব্যবস্থা তো এমনিতেই খারাপ তার ওপর এখন কমে গেছে বরাদ্ধ । জনগনের মাঝে অষন্তোষ দেখা দিল ।

বিরোধী দল চান্স নিতে চাইল । আবার আন্দোলন শুরু হলো । মানুষ রাস্তায় নেমে এল । কিন্তু পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কারনে তাদের সব আন্দোলন ব্যর্থ হল ।







৫ । (এফ্যাক্ট)

কিন্তু দু বছরের মধ্যেই ফল পাওয়া শুরু হলো । মেঘ না চাইতে বৃষ্টির ব্যাপারের ন্যায় ফল আসা শুরু করল ।

সবচেয়ে বেশি সাংঘাতিক যে ব্যপারটা ঘটল সেটা হলো ৩ বছরের মাথায় । ঐ এক বছরে ৫০ বিলিয়ন ইউএস ডলার (=৪০০০ বিলিয়ন টাকা) রেমিটেন্স ইনকাম আসল বাংলাদেশে । ইন্টারনেট ভিত্তিক ব্যবসায় উৎসাহ সফলতাই এর মুল কারণ । দেড় লক্ষেরও বেশি সংখ্যক ইন্টারনেট বেজ ব্যবসায়ীরাই (ছাত্ররা) মুলত এর নেপথ্যে (১৭ বিলিয়ন) যেটা ২০১৩ সালে ৪-৫ মিলিয়ন ছিল । প্রবাসীরা (২০ বিলিয়ন) যেটা ২০১৩ সালে ছিল ১৪ বিলিয়ন। এছাড়া শিল্প ও রপ্তানি খাতে ১২ বিলিয়ন । অন্যান্য খাতে ১ বিলিয়ন ।
দেশের বিভিন্ন স্থানে গুগল, মাইক্রোসফট, ওরাকল, ওয়ালমার্ট সহ উন্নত বিশ্বের বড় বড় কোম্পানি বিনিয়োগ করা শুরু করে দেয় । যেটা সারা দেশের মানুষের জীবনযাত্রা থেকে শুরু করে সব অবকাঠামোয় উন্নয়নের ছোয়া দেয় । দেশ বদলে যায় আমূল ।

- দেশের খাদ্যাভাব মোকাবেলায় খাদ্য বিষয়ক গবেষক ছাত্ররা ধানের ১-৩ মাস মেয়াদি ধানের বীজ আবিষ্কার করে ।
- গমের ফলন ১-৪ মাসের মধ্যে পাওয়া যায় এমন বীজের উৎপাদন ।
- বিদ্যুৎ সমস্যা মোকাবেলায় আবিষ্কার করল ৩ টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অতি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন স্বচ্ছ টেকসই সোলার প্যানেল । বিশ্ববিদ্যালয় ও বড় বড় এলাকায় এগুলো সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হলো । বিশেষত ধানি জমি ও ক্ষেত খামারের ওপর এগুলো লাগান হলো ।
- যানজট নিরসনে এক ছাত্র আবিষ্কার করে অভাবনীয় রাস্তা পরিকাঠামো ও ব্যবস্থা ।
- ড্রেন ও ময়লা সমস্যা মোকাবেলায় কড়া আইন ও নতুন মনিটরিং টিম করা হলো । এখানেও দেয়া হলো প্রযুক্তির ছোঁয়া ।
- আবাসন সমস্যা মোকাবেলায় দেশের পতিত জমির ওপর আর্কিটেক্ট করা হলো ।
- গার্মেন্টস শিল্প সহ সব শিল্প এলাকা আলাদা করা হলো ।







৬ । (এসপেক্ট)

সবই অর্জন শুরু হলো । হারাতে শুরু করলো জ্যাম ও ড্রেনের ঐতিহ্য । এরি মধ্যে বিরোধী দল বলে কিছু আছে জনগণ ভুলে গেল । জামায়াতের ৬ নেতার ফাসি হলো । কদাচিৎ আন্দোলন এটাও সরকার সামলে নিল । শিবির বলে কোনও ভয় থাকলো না । একটা সময় দেখা গেল শিবির যারা করতো তারা সরকারের সাথে ইন্টারনেট ও বিবিধ ব্যবসায় শরিক হচ্ছে । ছাত্রলীগের নেতাদের সাথে বিরোধ থাকলেও দেখা গেলো তারা ছাত্রদল শিবিরের সাথে ফুটবল খেলছে । 

দেশের ফুটবলের সময় ফিরে আসতে লাগল । ক্রিকেটে ৪ নম্বর র‌্যাংকিং আসলো । ২০২৫ সালের মধ্যে ফুটবলে বিশ্বকাপ খেলার আভাষ লাগলো জনগনের মধ্যে । আর কি কি জানি চাই ?
Share on Google Plus

গেম চেঞ্জার

বাংলাদেশ কে নিয়ে খালি স্বপ্ন দেখি না টুকটাক কাজও করি । মূলত যান্ত্রিকতায় আবদ্ধ এক সত্ত্বা। ছড়া, কাব্য, গল্পে, ছবি, ভ্রমণে, বিশ্লেষণেও নিজেকে খুঁজে ফিরি।
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 টি তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন